ইউক্রেনের এক মহিলা বলেছেন, তার স্বামীকে হত্যা করার পর রাশিয়ান সৈন্যরা তাকে বারবার ধর্ষণ করেছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা তার অভিযোগের তদন্ত করছেন। বলা হচ্ছে, রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর থেকে রাশিয়ান সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের এটাই প্রথম তদন্ত।
নাটালিয়া নামের (ছদ্মনাম) ওই নারী দ্য টাইমস কে বলেন, “আমি একটি মাত্র গুলির শব্দ শুনতে পেলাম, তারপর গেট খোলার শব্দ, তারপর ঘরে পায়ের শব্দ।”
তিনি জানান, ওই দুই রাশিয়ান সৈন্য এর আগে কিয়েভের বাইরে শেভচেনকোভের কাছে বাড়ির পাশ দিয়ে হাঁটার সময় তাদের কুকুরটিকে হত্যা করেছিল। ৯ মার্চ তারা ফের তার স্বামীকে হত্যা করতে ফিরে আসে। নাটালিয়া বলছিলেন- আমি চিৎকার করে বললাম, ‘আমার স্বামী কোথায়?’ আমি বাইরে তাকালাম। দেখলাম সে গেটের পাশে মাটিতে পড়ে আছে। এক যুবক আমার মাথায় বন্দুক টেনে বলল, ‘আমি তোমার স্বামীকে গুলি করেছি কারণ সে নাৎসি।’
ইনসাইডার এর এক প্রতিবেদনে নাটালিয়ার বরাতে বলা হয়- তিনি তার ৪ বছর বয়সী ছেলেকে বয়লার রুমে লুকিয়ে থাকতে বলেছিলেন যেখানে তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “সৈন্যটি বলে, তুমি চুপ করে থাকো নইলে আমি তোমার সন্তানকে নিয়ে এসে দেখাব যে তার মায়ের মগজ বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে আছে। সে আমাকে আমার জামাকাপড় খুলে ফেলতে বলে। তারপর তারা দুজন আমাকে একের পর এক ধর্ষণ করে। আমার ছেলেটা বয়লার রুমে কাঁদছিল, সেদিকে তারা পাত্তাই দেয়নি। তারা আমাকে বলে, বাচ্চাকে থামিয়ে আবার ফিরে আসতে। সারাক্ষণ তারা আমার মাথার কাছে বন্দুক ধরেছিল এবং আমাকে বাজে কথা বলছিল৷ আমরা কি তাকে মেরে ফেলব নাকি বাঁচিয়ে রাখব? এরকম প্রশ্ন করছিল।”
ইউক্রেনে হামলার সময় যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের একাধিক অভিযোগের মধ্যে নাটালিয়ার এই ঘটনাটিও একটি। ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল দ্বারা তদন্ত করা এটাই প্রথম মামলা। এই মাসের শুরুতে, ইউক্রেনের পার্লামেন্ট সদস্য লেসিয়া ভ্যাসিলেনকো যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের সাথে ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনা সম্পর্কে আলাপ করেছেন।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়- ভ্যাসিলেনকো বলেছেন, “আমাদের কাছে নারীদের গণধর্ষণের খবর এসেছে। এরা হলেন সেইসব মহিলা যারা সাধারণত বাইরে বের হতে পারেন না। আমরা প্রবীণ নাগরিকদের কথা বলছি। এসব নারীদের বেশিরভাগেরই হয় ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়েছে নতুবা তারা নিজেরাই আত্মহত্যা করেছে।”
ওই ঘটনার পর থেকে স্বামীর লাশ এবং নিজেদের ঘর ফেলে নাটালিয়া এবং তার ছেলে পালিয়ে আছেন। তিনি এখনও তার ছেলেকে বলেননি যে তার বাবা মারা গেছেন। “আমরা তাকে কবর দিতে পারছি না, আমরা গ্রামেও যেতে পারছি না, কারণ গ্রামটি এখনও দখল করে আছে। অবশ্য মুক্ত হলেও ফিরে আসবো কিনা তা জানি না। স্মৃতি বড় নির্মম। আমি জানি না কিভাবে এসব নিয়ে বাঁচবো। কিন্তু এটা জানি যে আমার স্বামী আমাদের জন্য এই বাড়িটি তৈরি করেছিল। আমি কখনোই এটা বিক্রি করতে পারব না”, তিনি বলছিলেন।