ধ্বংসস্তূপের মাঝে যুদ্ধের একটি নতুন সীমারেখা এঁকেছে ইউক্রেন, আর সেই রেখাটি হলো বাখমুত। খুব কম লোকই এটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। কিন্তু এর দখল নিয়ে যুদ্ধে হাজার হাজার লোক মারা গেছেন উভয়পক্ষের।
সাত মাসেরও বেশি সময় আগে এই লড়াই শুরু হয় এবং ইউক্রেন যুদ্ধে এটি এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম এক লড়াই।
বাখমুত ও এর আশপাশে তীব্র লড়াই চলার মাঝে শহরটির দক্ষিণ অংশে মোতায়েন দুটি ইউক্রেনীয় সেনা ব্রিগেড গত সপ্তাহে বিবিসিকে তাদের অবস্থানে ঢুকতে দিয়েছিল। এখানে ইউক্রেনীয় সেনারা রুশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত ইউনিট এবং ওয়াগনার (ভাড়াটে) গ্রুপের সেনাদের মুখোমুখি হয়েছেন, যারা তাদের ট্রেঞ্চের ওপর দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সেনারা বলছেন, রুশ পক্ষের হতাহতের সংখ্যা তাদের চেয়ে অনেক বেশি। তবে শত্রুরা নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে শহর এবং তার আশপাশের গ্রাম দখলের চেষ্টা করছেন।
অস্ত্র আর সংখ্যার বিচারে রুশ বাহিনীর শক্তি ইউক্রেনের বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু দক্ষিণের একটি পাহাড়ে যেখানে থার্ড সেপারেট অ্যাসল্ট ব্রিগেডের ট্যাংকবিধ্বংসী ইউনিটটি মোতায়েন রয়েছে, তারা হার মানতে রাজি নয়। এই ইউনিটকে ডাকা হয় ‘থ্রিস্টর্ম’ নামে। রুশ গোলন্দাজ বাহিনীর গোলা তাদের কাছাকাছি জায়গায় এসে পড়ছে। গোলার বিস্ফোরণে ট্রেঞ্চের কাঠের ছাদ যখন থর থর করে কাঁপতে থাকে, তখন মেঠো ইঁদুরগুলো কাঠের পাটাতনের ওপর ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। ট্রেঞ্চের কোনে বহু পুরনো একটি ফিল্ড টেলিফোন বসানো রয়েছে। কিন্তু তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে এমন দৃশ্য মোটেই অচেনা বলে মনে হবে না।
রুশ অবস্থানের দিকে নির্দেশ করে বলছিলেন ২৬-বছর বয়স্ক এক দাড়িওয়ালা সেনা, ওয়্যারলেসে যার কল সাইন ‘ডর্ফ’। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কাছে ঘেঁষতে পারবে না। আমরা এখান থেকে চারদিকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত সব কিছু পরিষ্কার দেখতে পাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যা কিছু আছে এখান থেকে তা দিয়েই আমরা শত্রুর ওপর আঘাত হানতে পারি’।
রুশ কিংবা ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী- কেউ-ই বাখমুত বা অন্য কোনো যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা সরকারিভাবে প্রকাশ করেনি। তবে এখানকার লড়াইয়ে প্রায় পরিত্যক্ত এই শহরটি এখন একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে।
এক সপ্তাহ ধরে শহরটির দখলের লড়াইয়ে থ্রিস্টর্ম কোম্পানির সেনারা ওয়াগনার (ভাড়াটে) সেনাদের মুখোমুখি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর আমাদের মধ্যে লড়াই হয়েছে। আমার অনুমান, একটি একক কোম্পানি প্রতিদিন ৫০ জন করে শত্রু নির্মূল করেছে।’
আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেন দাবি, তার নিজের প্রতি একজন সেনার বিপরীতে রাশিয়ার সেনা মারা গেছে সাতজন করে। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে রাশিয়া দাবি করেছে যে বাখমুত দখলের যুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা ২২০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা হত্যা করেছে। তবে এসব সংখ্যার কোনোটিই স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে ওয়াগনার গ্রুপের দুজন বন্দি সেনা জানিয়েছেন, যুদ্ধের ময়দানে পাঠানোর আগে অন্ধকারে বনের মধ্য দিয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার বাইরে তাদের প্রশিক্ষণ হয়েছে খুব সামান্যই। তাদের শর্ত ছিল- ছয় মাস ফ্রন্টে দায়িত্ব পালনের পর থেকে তারা মুক্ত হবে, যদি ততদিন পর্যন্ত তারা বেঁচে থাকে।
ফেরার পথে ওলেগ জিপটিকে হঠাৎ থামিয়ে দেয়। সামনে কাদার মধ্যে পড়েছিল একটি ড্রোন, যেটি তার গন্তব্যপথ থেকে সরে গিয়েছিল। এর ব্যাটারিটি দ্রুত বের করে নেওয়া হয় এবং একে গাড়িতে তোলা হয়। এটি ছিল একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন।