গত জুন মাসে মার্কিন নাগরিক ও খালিস্তানপন্থি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠে ৫২ বছর বয়সী ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে নিখিলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই বিষটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। এটা ভারত সরকারের নীতিবিরোধী। আর যেহেতু বিষয়টি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত, তাই পুরো ঘটনা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছে ভারত।
তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় সংঘটিত অপরাধ, আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারি ও সন্ত্রাসবাদীদের যোগসাজশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কাছে কিছু তথ্য দাখিল করেছিল। এ ধরনের তথ্য আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি।
‘সেসব তথ্য খতিয়ে দেখতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে এখন বাড়তি আর কিছু জানানো সম্ভব নয়।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, নিখিল গুপ্ত আন্তর্জাতিক মাদক ও অস্ত্র পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। চলতি বছরের মে মাসে ভারত সরকারের একজন কর্মকর্তা তাকে পান্নুন হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নিয়োগ করেছিলেন।
নিখিল গুপ্তকে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে একজন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর নিউ ইয়র্ক শহরে ওই হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে এমন একজন ভাড়াটে খুনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন তিনি।
কিন্তু সেই ভাড়াটে খুনির বদলে একজন ছদ্মবেশী আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যিনি এক লাখ ডলারের বিনিময়ে ওই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে রাজি হন।
একটি মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নিজ নাগরিককে খুনের ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে বিবৃতিও জারি করেন মার্কিন অ্যার্টনি ডামিয়ান উইলিয়ামস।
২০২০ সাল থেকেই ভারতে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক পান্নুন। তাকে হত্যাচেষ্টার বিষয়ে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছিল বলেও দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, এই ঘটনা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এতটাই বিচলিত করেছিল যে সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস আর ডিরেক্টর অব ন্যাশানাল ইন্টেলিজেন্স অ্যাভ্রিল হেইনসকে তিনি ভারতে পাঠিয়েছিলেন।
এর আগে চলতি বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে তার দেশের কাছে। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে ভারত সরকার। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।