১৮ বছরের তরুণী ছিলেন পূজা কুমারি। থাকতেন পাকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিন্ধু প্রদেশের রোহরি শহরে। পরিবারের ভাষায়, পূজার মতো তারুণ্যে ভরপুর মানুষ আর হয় না। কিন্তু স্থানীয় এক প্রভাবশালী বংশের ছেলের ওয়াহিদ লাশারির হাতে মরতে হলো তাকে। পূজাকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করতে চেয়েছিল ওয়াহিদ। সে জন্য তাকে বাড়ি থেকে অপহরণের চেষ্টা করে সে ও তার দুই সহযোগী। কিন্তু অপহরণে ব্যর্থ হয়ে পূজাকে গুলি করে হত্যা করে তারা। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে সিন্ধুর রাজধানী করাচি থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দূরের রোহরি শহরে।
নিহত পূজার চাচা ওধ জানান, ওই এলাকায় লাশারি বংশের ব্যাপক দাপট। সেই বংশের ছেলে ওয়াহিদ বাক্স লাশারি বহুদিন ধরে পূজাকে উত্যক্ত করতো। এই মাসের শুরুতেও ২৪ বছর বয়স্ক ওয়াহিদ পূজাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করার হুমকি দিয়েছিল। সেসময় স্থানীয় পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে গেলেও তারা কোনো আগ্রহ দেখায়নি। লাশারিদের ক্ষমতার সামনে প্রশাসনও একদম চুপ।
পুলিশের কাছে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরই গত ২১শে মার্চ ওয়াহিদ লাশারি দুই সহযোগীসহ পূজাদের বাড়িতে হামলা চালায়। সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ওয়াহিদ। তবে পূজা অপহরণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করলে ওয়াহিদ তাকে গুলি করে হত্যা করে। ওধ জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলেই মারা যান পূজা। সে তার ধর্মকে হারানোর থেকে মৃত্যুকেই ভাল মনে করেছে।
পূজার মৃত্যুর পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ব্যাপক শেয়ার ও নেটিজেনদের মধ্যে ঘটনা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষের পর টনক নরে প্রশাসনের। গ্রেপ্তার করা হয় লাশারি ও তার দুই সহযোগীকে। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা বশির আহমেদ আল-জাজিরাকে জানান, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামী তার দোষ স্বীকার করেছেন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, পূজা কুমারির হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রতি বছরই পাকিস্তানে হাজারো সংখ্যালঘু মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশেষ সহযোগী হাফিজ তাহির মাহমুদ বলেন, এ ধরণের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা ইসলাম সমর্থন করে না। আমরা সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। পূজার সঙ্গে যা হয়েছে, আমরা তার হত্যাকারীর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং তার পরিবারের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবো।
২০১৭ সালের জরিপ বলছে, পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ মুসলিম। হিন্দু আছেন মাত্র ২ শতাংশ। দেশটির হিন্দু জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশই এই সিন্ধু প্রদেশে বাস করে। ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণে বিশ্বের যে ক’টি দেশ উদ্বেগজনক অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান তাদের মধ্যে অন্যতম। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র এ কারণে পাকিস্তানকে ‘কান্ট্রিস অব পার্টিকুলার কনসার্ন’ তালিকায় যুক্ত করেছে। অধিকার কর্মীরা বলছেন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা ও বিয়ের শিকার অনেক ভিক্টিমের বয়স ১২ বছরেরও কম।