তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। গ্রীষ্ম শেষ হলেও দেশটিতে তাপপ্রবাহ কমার কোনও লক্ষণ নেই। উল্টো অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গরম বেড়েই চলেছে। পুড়ে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত, নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল। এমন পরিস্থিতি দেশটির অর্থনৈতিক সংকটে নতুন চাপ তৈরি করছে।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি আর্জেন্টিনায় গ্রীষ্মকাল বিবেচিত হয়। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ম্যাক্সিমিলিয়ানো হেরারার মতে, এবার দেশটি রেকর্ড উষ্ণ ছিল। কিন্তু মার্চে এসেও স্বস্তির কোনও লক্ষণ নেই।
আর্জেন্টিনার আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুসারে, পূর্ব-মধ্য আর্জেন্টিনায় মার্চের প্রথম ১০ দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এর প্রভাব ছিল বিস্তৃত এলাকায়। হেরারার মতে, আর্জেন্টিনার জলবায়ুর ইতিহাসে এমন কিছু আগে ঘটেনি। লা নিনার প্রভাবে সাময়িক গরমের আশঙ্কা করলেও এতটা ভাবেননি তিনি। তাপমাত্রা রেকর্ড বারবার পরিবর্তিত হচ্ছে।
রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিদিন ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। সারা দেশের একাধিক স্থানে চলতি মাসে ৬৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
কৃষি বিশ্লেষক মিকেল আত্তিয়া জানান, তাপমাত্রার কারণে কর্ডোবা, সান্তা ফে ও উত্তর বুয়েনস আইরেসের মতো প্রধান কৃষি প্রদেশগুলোতে ভুট্টা ও সয়াবিনের ওপর বিপর্যয় নেমে এসেছে।
৩০ বছরের রেকর্ড খরায় ভুট্টা ও সয়াবিন উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ২০-৩০ শতাংশ কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গমও। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর রফতানি ২৮ শতাংশ হ্রাস পাবে। অর্থনৈতিক গবেষক জুলিও ক্যালজাদা বলেছেন, কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
দাবানলে উত্তর-পূর্ব আর্জেন্টিনায় এ বছর এক লাখ হেক্টরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে।
কৃষি সংকট আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এই সপ্তাহে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশটির বার্ষিক মূল্যস্ফীতি তিন দশকের মধ্যে প্রথমবার ১০০ শতাংশে উঠে এসেছে। যা বিশ্বের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির হারের একটি।