রাশিয়ার জব্দ সম্পদ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে একমত হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলন শেষে এই তথ্য নিশ্চিত করেন ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন দের লিয়েন। মূলত বর্তমানে ইউক্রেনের গোলাবারুদ সংকট নিরসনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে জব্দ করা রুশ সম্পদ থেকে ইউক্রেনের জন্য বছরে প্রায় ৩৩০ কোটি ডলারের ব্যবস্থা হতে পারে। এরই মধ্যে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ২০ হাজার কোটি ইউরোর সম্পদ জব্দ করেছে ইইউ।
ইইউ নেতাদের দাবি, জব্দ করা রুশ সম্পদ থেকে পাওয়া মুনাফা ব্যবহারের পরিকল্পনাটি বৈধ। তবে ক্রেমলিন সতর্ক করে বলেছে, তারা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে ও ও প্রতিশোধের অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করবে।
পশ্চিমে আটক থাকা সব রুশ সম্পদের প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যাংক সিকিউরিটিজ বা নগদ হিসেবে রক্ষিত রয়েছে বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি ইউরোক্লিয়ারে। এর মূল্য প্রায় ১৯০ বিলিয়ন ইউরো। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি মস্কো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রস্তাব পাস হলে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক আরও তিক্ত হবে বলেই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। কারণ, বিষয়টির জেরে এরই মধ্যে ইউক্রেনজুড়ে হামলাও জোরদার করেছে রুশ সেনারা।
এদিকে, নতুন করে ছয় বছরের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এই জয়ের মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর পুতিনের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার হয়ে গেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশেরই। যুদ্ধে ইউক্রেনের তিন লাখেরও বেশি সেনাসহ হতাহত হয়েছেন লাখো বেসামরিক নাগরিক। সংঘাতের প্রথম বছরই ব্যাপক ধস নামে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে।
তবে চাপ সামলে প্রথম থেকেই কূটনৈতিক কৌশল, সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতায় ইউক্রেনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার পশ্চিমা মিত্ররা। অন্যদিকে, চাপে রাখতে রাশিয়ার উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী সব দেশ।
তবে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউক্রেন থেকে মনোযোগ অনেকটাই সরে আসে তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের। সেই সঙ্গে সুযোগ বুঝে পশ্চিমা দেশগুলোও মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। এর মধ্যে রুশ বাহিনীও হামলা জোরদার করে।
এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকদিন ধরেই রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনকে দিতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানায় কিয়েভ। এই অর্থ দেশের পুনর্গঠন ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যবহার করতে পারবে বলেও জানায় জেলেনস্কি প্রশাসন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েই বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্ত নেই ইইউ।
এর আগে একটি ভার্চুয়াল ভিডিওবার্তায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের উদ্দেশে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেনের গোলাবারুদের সংকট ইউরোপের জন্য অপমানজনক। ইউরোপ যে আরও বেশি কিছু দিতে পারে, তা প্রমাণ করার মোক্ষম সময় এখনই।