আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে ৯ জনকে বেত্রাঘাত করেছে। সেইসঙ্গে চুরির অভিযোগে চারজনের হাত কেটে নিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) কান্দাহারের আহমেদ শাহি স্টেডিয়ামে চাবুক মারার ঘটনা ঘটে। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ডাকাতি ও সমকামিতার দায়ে নয়জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি আফগানিস্তানের টোলো নিউজ টুইট করেছে।
বেত্রাঘাতের সময় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং কান্দাহারের বাসিন্দারা স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন। প্রাদেশিক গভর্নরের মুখপাত্র হাজি জায়েদ জানিয়েছেন, দোষীদের ৩৫ থেকে ৩৯টি বেত্রাঘাত করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ-আফগান সমাজ ও রাজনৈতিক কর্মী শবনম নাসিমি জানিয়েছেন, গতকাল কান্দাহারের একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে দর্শকদের সামনে তালেবানরা চারজনকে কেটে ফেলেছে বলে জানা গেছে। চুরির অপরাধে তাদের হাত কেটে ফেলা হয়েছে।
আফগানিস্তানে ন্যায়বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই মানুষকে বেত্রাঘাত করা হচ্ছে, বিকৃত করা হচ্ছে এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে জানান শবনম নাসিমি।
তালেবানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা গত বছরের নভেম্বরে দেশটির বিচারকদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বৈঠকে তিনি কিছু অপরাধের জন্য শরিয়া আইনে শাস্তি প্রদানের জন্য বিচারকদের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে তালেবানরা প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত চালাচ্ছে।
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তালেবান আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় ফারাহ প্রদেশে হত্যার দায়ে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তালেবান ২০২১ সালের আগস্টে দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে। এই দফায় ক্ষমতা দখলের পর এদিনই তালেবান প্রথম প্রকাশ্যে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও, আফগান তালেবান তাদের সর্বোচ্চ নেতার একটি ডিক্রি অনুসরণ করে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ও অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা শুরু করেছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা আফগানিস্তানে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ও মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা তালেবান কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কঠোর, নিষ্ঠুর ও অবমাননাকর শাস্তি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ১৮ থেকে তালেবান কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে শতাধিক লোককে বেত্রাঘাত করেছে বলে জানা গেছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে প্রথম তালেবান শাসনামলে, বেত্রাঘাত ও পাথর মারার মতো কঠোর শরিয়া আইনের শাস্তি কার্যকর ছিল। যাইহোক, তালেবানরা দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা অতীতের মতো দেশ শাসন করবে না। তবে তালেবানরা তাদের পুরনো পথে ফেরার লক্ষণ দেখাচ্ছে।