আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশের ১০ জন নারী গবেষককে তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণার অনুদান হিসেবে চার লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন কোটি ৬৮ লাখ) পুরস্কার দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশের নারী বিজ্ঞানীদের জন্য মুজিব শতবর্ষ স্বাস্থ্য গবেষণা অনুদান’ পুরস্কার বিতরণ করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে এবং আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানভিত্তিক উৎকর্ষের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ পুরস্কার দেওয়া হলো।
এই গবেষণা অনুদান প্রদানের এ ধরনের পদক্ষেপ এবারই প্রথম; যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের নারী গবেষক ও বিজ্ঞানী গড়ে তোলা। প্রকল্পগুলো যথাসময়ে, কার্যকরভাবে এবং দক্ষতার সাথে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সায়েন্টিস্টরা পুরস্কার বিজয়ীদের দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দেবেন।
যে ১০ জন নারী গবেষক তাদের গবেষণা প্রকল্পের জন্য পুরস্কার পেলেন তারা হলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মোসাম্মৎ কামরুন নেসা, চট্টগ্রামের বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ডা. তানজিলা করিম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভার্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের তাহমিনা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াসিফা তাসনিম শাম্মা, টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মোসাম্মৎ নুরজাহান খাতুন, আইসিডিডিআর,বির ডা. নওশিন পাপড়ি, ডা. শাহরিয়া হাফিজ কাকন, ডা. কামরুন নাহার কলি, ডা. নুরুন নাহার নায়লা ও গুলশান আরা।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আইসিডিডিআর,বি যোগ্য নারী গবেষক ও বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা অনুদান প্রদান করেছে বলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস নারীর ক্ষমতায়নের এই উদ্যোগ বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। ’
আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘বিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন, কারণ নারী গবেষকরা বড় ধরনের উদ্ভাবন ও যুগান্তকারী গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যোগ্য নারী গবেষকদের জনস্বাস্থ্যে তাদের গবেষণা ও উদ্ভাবন শুরু করতে এবং তাদের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সহায়তা করার জন্য এই পুরস্কার প্রদান করতে পেরে আইসিডিডিআর,বি গর্বিত। ’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আইসিডিডিআর,বির কৌশলগত লক্ষ্য এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আটটি বিষয়ের আওতায় পুরস্কার বিজয়ীদের এই গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো : মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, আন্ত্রিক ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, উদ্ভবশীল ও পুনরুদ্ভবশীল সংক্রমণ, অপুষ্টি, সর্বজনীন স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অসংক্রামক রোগ এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অধিকার। পুরস্কার বিজয়ীদেরকে তাদের প্রস্তাবনা এবং প্রকল্প প্রধানের সনদসমূহের গুণমানের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত আইসিডিডিআর,বির সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ (স্যাগ) প্রকল্পসমূহের মূল্যায়ন করেছে।
অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ী মোসাম্মৎ নুরজাহান খাতুন বলেন, ‘আইসিডিডিআর,বির তরফ থেকে এই সম্মানজনক গবেষণা অনুদান প্রাপ্তি আমার গবেষণা কর্মজীবনে একটি মাইলফলক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জাতীয় ও বৈশ্বিক সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে একজন নারী বিজ্ঞানী হিসেবে আমার দড়্গতা বৃদ্ধিতে এটি সহায়তা করবে। ’
পুরস্কার বিজয়ী গুলশান আরা বলেন, ‘এই পুরস্কার আইসিডিডিআর,বিতে আমার কর্মজীবনে সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য আমার গবেষণার ক্ষমতা ও দক্ষতাকে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। আমি শিশু ও মায়েদের অপুষ্টি লাঘবের উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ গ্রহণে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে চাই, যা আমার দেশকে এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সহায়তা করবে। ’