সম্প্রতি প্রায় ৫০ বছর আগের ‘রো ভার্সেস ওয়েড’খ্যাত মামলার রায় বাতিল করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। গত শুক্রবার এই রায় দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
এর জেরে শুক্রবার রাত থেকেই দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল করেন অনেকে। থামছে না সেই বিক্ষোভ বরং নতুন করে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়েছে দেশটির বিভিন্ন স্থানে।
বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে অ্যারিজোয়ানা। গর্ভপাতের অধিকার রক্ষার দাবিতে শনিবার মূল প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিভোক্ষ দেখাচ্ছিলেন এক দল আন্দোলনকারী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পক্ষ নিয়ে অন্য একটি দলও হাজির হয় সেখানে। পাল্টা প্রতিবাদ জানান তারাও। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বেধে যায়। বিক্ষোভকারীদের কয়েক জন প্রশাসনিক ভবনের কাচের দরজার ঘা দিলে কাঁদানে গ্যাসের গোলা ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। সব মিলিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভবনের ভিতরে তখন প্রশাসনিক বৈঠক চলছিল। নিরাপত্তার খাতিরে সরকারি কর্মকর্তাদের ২০ মিনিটের জন্য মাটির নিচে বাঙ্কারে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে হয়।
সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণার দিনই এই আইন কড়াভাবে চালু করেছে দেশটির মিসৌরি অঙ্গরাজ্য। ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রেও ছাড় মিলবে না সেখানে। এরপরই আলাবামা, আরকানস, কেন্টাকি, লুইজিয়ানা, ওকলাহোমা, সাউথ ডাকোটা, উটার মতো আটটি প্রদেশ আইন কার্যকর করেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত আরও ছ’টি প্রদেশে গর্ভপাত নিষিদ্ধ হতে চলেছে।
পশ্চিম ভার্জিনিয়ার চার্লসটনে গর্ভপাতের অধিকার ফিরিয়ে দিতে মোমবাতি মিছিল করেন অন্তত ২০০ জন। তাদের একজন কেটি কিনোনিজ। কেটি ওই প্রদেশের নারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শীর্ষকর্তা। তিনি বললেন, “রায় শোনার পর রাগের চোটে ফোনটা দেওয়ালে ছুড়ে দিয়েছিলাম।”
কেটি জানান, এই রায়ের প্রেক্ষিতে গর্ভপাতের জন্যে স্লট বুকিং করেছিলেন, এমন ৭০ জন অন্তঃসত্ত্বাকে ফোন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করতে হয়েছে। তারা হয় আর গর্ভপাত করতে পারবেন না অথবা যেখানে এখনও তা নিষিদ্ধ হয়নি, তেমন কোথাও যেতে হবে।
তবে মিনেসোটা, মিসিসিপির মতো কয়েকটি প্রদেশে অন্য ছবিও রয়েছে। মিসিসিপির একমাত্র গর্ভপাত কেন্দ্রটি শুক্রবারেও কাজ বন্ধ করেনি। মিনেসোটায় এখনও গর্ভপাত আইনত স্বীকৃত। গর্ভপাত করাতে যারা সেখানে আসতে চান, তাদের আইনি রক্ষাকবচ দিতে একটি বিশেষ নির্দেশ জারি করেছেন গভর্নর টিম ওয়ালজ। তিনি বলেন, “জনন-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত স্বাধীনতা রক্ষায় আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিষয়টি বিলক্ষণ নজরে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।