গ্লোবালাইজেশনের যুগে গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন একটা দেশ উত্তর কোরিয়া। যেন নিষিদ্ধপুরী। তাই দেশটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। দেশটির সরকার নতুন কী সিদ্ধান্ত নিল, সেনাবাহিনীতে নতুন কী যোগ হলো, নিউক্লিয়ার কার্যক্রম কতটা মারাত্মক হয়েছে ইত্যাদি নিয়ে উদ্বিগ্ন ক্ষমতাধররা।
উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে যেন আস্ত প্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। দেশের ভেতরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তার খুব কম তথ্যই বাইরে থেকে জানা যায়। কিমের প্রশাসন খুব সতর্কভাবে উত্তর কোরিয়ায় তৈরি করেছে ‘অচলায়তন’।
নাগরিকরা তো বটেই, উত্তর কোরিয়ায় কিমের কঠোর অনুশাসন থেকে রেহাই পান না দেশটির ফার্স্টলেডিও। নিজের স্ত্রীর জন্যও একগুচ্ছ কঠোর নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন কিম।
কিমের স্ত্রী রি সোল জু। ২০০৯ সালে তাদের বিয়ে হয়েছে। ২০১২ সালে উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমে কিমের পাশে প্রথম তাকে দেখা যায়। তার আগে তিনি জনসমক্ষে আসেননি বলেই মনে করা হয়। বাড়ির বাইরে পা রাখলেও প্রচারের আলোয় তাকে দেখা যায়নি।
উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিয়ের আগে রি সোল ছিলেন সংগীতশিল্পী। চিয়ারলিডার হিসাবেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। বিয়ের পর অবশ্য সেসব বন্ধ হয়ে গেছে। তার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না।
শোনা যায়, রি সোলকে একপ্রকার জোর করেই বিয়ে করেছেন কিম। বিবাহে তাকে বাধ্য করা হয়। স্বামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাত্রীর কোনো মতামতই নাকি গ্রহণ করা হয়নি। তাদের বিয়ের সময় উত্তর কোরিয়ার শাসক ছিলেন কিমের বাবা কিম জং ইল। তার নির্দেশেই রি-কে বিয়ে করেন কিম।
কিমকে বিয়ে করার পর যেন রির পুনর্জন্ম হয়। তার পূর্ব জীবনের স্মৃতি ‘মুছে দেওয়া হয়’। রি-কে নতুন নাম নিতে হয়। বিয়ের আগে কিমের স্ত্রীর অন্য একটি নাম ছিল। কী সেই নাম? কেউ তা জানেন না। এমনকি রির জন্ম সালও অজানা। ফলে তার বয়স অনুমান করা যায় না।
রির বাবা পেশায় অধ্যাপক। মা দেশের এক বিখ্যাত হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক। তাদের সম্পদের পরিমাণ কম নয়। কিন্তু অভিযোগ, রি-কে তার নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না। মা, বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ বিয়ের পর থেকেই।
পরনের পোশাকের ক্ষেত্রেও রি ‘বন্দি’। প্রথম দিকে তাকে জিন্স, টপ এবং পাশ্চাত্যের অনুকরণে নানা আধুনিক ফ্যাশনের পোশাক পরতে দেখা যেত। কিন্তু পরে তার জিন্স পরা নিষিদ্ধ করে দেন কিম। নিজের পছন্দ অনুযায়ী, পোশাক রি পরতে পারেন না। তার জন্য রক্ষণশীল, শরীর ঢাকা পোশাক নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
কিমের স্ত্রীর চুলের স্টাইলও গতে বাঁধা। অভিযোগ, রি-কে নিজের ইচ্ছামতো চুল আঁচড়াতে দেওয়া হয় না। চুল বাঁধার ক্ষেত্রেও তাকে ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ নীতি মেনে চলতে হয়।
রি-কে সব সময় কিমের সঙ্গেই দেখা গেছে। একা কখনো উত্তর কোরিয়ার ফার্স্টলেডিকে দেখা যায় না। সূত্রের দাবি, রি কখন কোথায় যাবেন, কখন বাড়ি থেকে বেরোবেন, তা ঠিক করে দেন কিম। নিজের ইচ্ছায় তিনি কিছু করতে পারেন না। সব অনুষ্ঠানে রির যাওয়ার অনুমতি নেই।
দেশের ফার্স্টলেডি রি, একনায়কের স্ত্রী। কিন্তু তাকে ঘিরে দেশের সংবাদমাধ্যমের যে জনপ্রিয়তা স্বাভাবিক, তা সচরাচর দেখা যায় না। সংবাদমাধ্যমের কেউ রির নাগাল পান না। তাকে দেখা গেলেও ছবি তোলার সাহস করেন না কেউ। রি এবং কিমের পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিয়ের আগে একাধিকবার রি বিদেশে গিয়েছিলেন। চিয়ারলিডার হিসাবে একবার দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছিলেন তিনি। এমনকি রি উচ্চশিক্ষার জন্য যান চীনেও।
কিন্তু কিমকে বিয়ে করার পর রির বিদেশযাত্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিমও কখনো স্ত্রীকে নিয়ে দেশের বাইরে যাননি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রের দাবি, উত্তর কোরিয়ার কোনো রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু হলে শেষকৃত্যে কিমের সঙ্গে থাকেন রি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই সূত্রেই ফার্স্টলেডি ঘরের বাইরে পা রাখতে পারেন।