কাশ্মীরে ‘একতরফা একশনের’ বিরোধিতা করেছে চীন। রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনায় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সিপিইসি কর্মসূচিতে ৬০০০ কোটি ডলারের অধীনে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। শি জিনপিং যথাযথভাবে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। এ খবর দিয়েছে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই।
এতে বলা হয়েছে, চীন যাদের দিকে ইঙ্গিত করে কথা বলেছে, তা হলো ভারত। এর আগে তারা জম্মু ও কাশ্মীরকে ইঙ্গিত করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। তা ভারত আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, লাদাখের মতো ইউনিয়ন টেরিটরিগুলো এখনও ভারতের অখ- অংশ হয়ে আছে এবং থাকবে।
ইমরান খান তার চার দিনের চীন সফরের শেষ দিন রোববার প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
সেখানে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি)-এর কর্মকা-ে ধীর গতি নিয়ে আলোচনা হয়। পাকিস্তানের ভিতরে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের ওপর বার বার হামলার কথা তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শি জিনপিং। চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, মর্যাদা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে চীন। শি জিনপিং বলেন, সিপিইসির গভীর উন্নয়নে পাকিস্তানকে সামনে এগিয়ে দিতে হাত প্রসারিত করতে আগ্রহী চীন। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নিশ্চয়তা দেন তিনি।
বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইমরান খান যোগ দেয়ার পর একটি যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় সব পক্ষের অভিন্ন স্বার্থে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে উভয় পক্ষ। এক্ষেত্রে তারা বিরোধপূর্ণ আঞ্চলিক সব সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর জোর দেন। বলেন, স্থায়ী শান্তি, স্থিতিশীলতা ও এ অঞ্চলের অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং অগ্রবর্তী লক্ষ্য।
এতে আরও বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে চীনা পক্ষকে অবহিত করেছে পাকিস্তান। এই মুহূর্তে সেখানে যে অবস্থা বিরাজ করছে, যে চাপ রয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগও তুলে ধরা হয়েছে। চীনা পক্ষ পুনর্বার বলেছে, ইতিহাসের ধারাবাহিতকায় বিরাজমান কাশ্মীর ইস্যু।
জাতিসংঘ সনদ, প্রাসঙ্গিক নিরাপত্তা পরিষদের রেজুল্যুশন এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর ভিত্তি করে এ সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে শান্তিপূর্ণ ও যথাযথভাবে। একতরফা যেকোনো একশনের বিরোধী চীন। কারণ, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল করবে।
ওদিকে ২০২১ সালের জুলাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি কথিত সিপিইসিতে যে রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছিল, তার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতীয় ভূখ-ের অধীনে। তা বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছে পাকিস্তান। অতীতে ভারত স্পষ্টভাবে জম্মু ও কাশ্মীরকে নিয়ে রেফারেন্স প্রত্যাখ্যান করেছে। জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখের ইউনিয়ন টেরিটরি সব সময় ভারতের অখ- অংশ ও তা ভারতের সঙ্গেই থাকবে।
ভারতের এই মুখপাত্র বলেছেন, চীন ও পাকিস্তানকে বার বার ভারত বলে এসেছে যে, তথাকথিত সিপিইসি ভারত ভূখ-ে। তার ভাষায়, পাকিস্তান বেআইনিভাবে যে অঞ্চল দখল করে আছে সেখানকার স্ট্যাটাস পাল্টে দিতে অন্য দেশগুলোর যেকোনো উদ্যোগের বিরোধী ভারত। ভারতের ভূখ-ে পাকিস্তান যেকোনো রকম পরিবর্তন করতে গেলে তারও বিরোধী ভারত। এমন কর্মকা- এড়িয়ে চলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে ভারত।
চীন ও পাকিস্তান যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে তাতে পাকিস্তানের আত্মত্যাগ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। উভয় পক্ষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
উল্লেখ্য, যুদ্ধ বিষয়ক ট্যাংক, যুদ্ধবিমান ও সর্বশেষ নৌবাহিনীর জন্য ফ্রিগেট সহ পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন। তাই ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতে দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেছেন শি জিনপিং।