English

25 C
Dhaka
বুধবার, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
- Advertisement -

কলকাতায় চিকিৎসক হত্যার প্রতিবাদ যেভাবে গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে

- Advertisements -

পশ্চিমবঙ্গের আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে পুরো দেশ। প্রথমে কলকাতা শহরে সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে তা অন্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। একটা সময় এই প্রতিবাদ রুপ নয় গণ আন্দোলনে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের ডাকও দেওয়া হয়েছে এই আন্দোলন থেকে।

কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছাড়াই কিভাবে গড়ে উঠলো আন্দোলন, যে আন্দোলন রাতারাতি এলোমেলো করে দিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসকে।

ছাত্রী ও সংগঠক ঝিলম রায় বলেন, ‘এটা একটা অস্বাভাবিক ঘটনা, যেভাবে মানুষ মানুষকে সংগঠিত করেছিল, স্বাধীনতার আগের রাতে গত ১৪ আগস্ট।একেক জায়গায় যেন একেক রকম। কোথাও পাড়ার বন্ধুরা নিজেরাই মিছিল করলো। কোথাও এগিয়ে এলো কোনো গানের দল, কোথাও বা নাচের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। ক’দিনের মধ্যেই একজোট হয়ে গেল সবাই।’

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তৃণমূল কংগ্রেস-বিরোধী রাজনৈতিক দল যেমন সিপিআইএম বা বিজেপিও মাঠে ছিল, কিন্তু স্বাধীনতার রাতে যে গণবিস্ফোরণ রাস্তায় রাস্তায় দেখা গেল তার রাশ যে পুরোপুরি সাধারনের হাতে ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ’

গত ৯ আগস্ট কলকাতার অন্যতম প্রধান মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল আর জি করে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে নিপীড়ন, ধর্ষণ এবং হত্যার অভিযোগে রাস্তায় নেমে আসে প্রায় গোটা রাজ্য। শুরু হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, মিটিং-মিছিল। ঘটনার মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে গত ১৪ আগস্ট রাতে পাড়ায় পাড়ায় নারী-পুরুষ-শিশু-যুবক মিছিল করেছেন, স্লোগান দিয়েছেন, গান গেয়েছেন মৃতার হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে। ঝিলম জানালেন, তাদের হিসাব মতো পশ্চিমবঙ্গের মোটামুটি আড়াইশো জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে ওই রাতে।

মার্কিন সংবাদমাদ্যম ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদনের বলা হয়, এরই মধ্যে আন্দোলন যে আরও ধারালো হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের পথে নামা দেখেই। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে মিটিং-মিছিল শুরু করেছে, বিরোধীদের পাল্টা ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করতে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিরোধী কারা? মূল স্রোতের রাজনৈতিক দল যেমন সিপিআইএম বা বিজেপি, নাকি সাধারণ মানুষ?

কলকাতা শহরে অন্তত মনে হচ্ছে, আন্দোলন এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন সাধারণ মানুষ, ছাত্র-ছাত্রী, চাকুরীজীবী, পেশাজীবী থেকে কর্মহীন সবাই। অবশ্যই সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, জুনিয়র ডাক্তার, নার্স, প্যারা-মেডিক বা অন্যান্য কর্মীরা অনেকটাই রয়েছেন আন্দোলনের সামনের সারিতে।

বিভিন্ন হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করেন বনশ্রী চ্যাটার্জি। তিনি বলছিলেন, এই আন্দোলন তাদের সবাইকে আতঙ্কিত করেছে। “আমরা সবাই আতঙ্কিত এবং আমাদের দাবিও একটাই যে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। আর এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তা মাথায় রেখে আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।”

বনশ্রী কোনো রাজনৈতিক দল বা নির্দিষ্ট মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার জোরালো বক্তব্য প্রমাণ করে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-বিরোধী এই আন্দোলন এখনো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষই।

সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভের মূল কারণ মমতা নিজেই।   তার দলেরই দক্ষিণ কলকাতার ৮৫ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা এই প্রসঙ্গে বললেন, “এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে আর জি করের দায়িত্বে থাকা প্রিন্সিপালকে (সন্দীপ ঘোষ) সাসপেন্ড বা গ্রেপ্তার না করে কিভাবে মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে অপর একটি মেডিকেল কলেজের (ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ) একই পদে বসিয়ে দেওয়া হলো বুঝলাম না। এতে প্রচন্ড ক্ষেপে যান মানুষ।”

ওই নেতার ব্যাখ্যা যে দিদি অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার আশপাশে থাকা উপদেষ্টারা ভুল বোঝাতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘আবার এটাও হতে পারে যে ওই দিন দিদি কলকাতায় না থাকার ফলে, তাঁর অজান্তেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

যেটাই হোক না কেন, মানুষ যে ক্ষেপে আছেন তা স্বীকার করে ওই নেতা বললেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুত্থান আমাদের আরো বিপদে ফেলে দিল। বাংলাদেশ দেখে এখানে সবাই ভাবলেন তারাও সরকার ফেলে দিতে পারেন। কোনো সিনেমা যখন হিট করে, তখন সবাই সেটা দেখতে যায়। কিন্তু যখন তার ‘রিমেক’ হয়, তখন তা আর হিট করে না। ঢাকার পুনরাবৃত্তি কলকাতায় হবে না।”

এই আন্দোলনে নারীদের মধ্যে ঝিলম রায় বা বনশ্রী চ্যাটার্জির মতো যারা পথে নেমেছেন, তারা এর নামকরণ করেছেন, ‘রিক্লেম দ্যা নাইট’ বা রাত দখলের অধিকার, যে অধিকার নারীদের সব দেশেই অপেক্ষাকৃতভাবে কম। কলকাতার মুসলমান সমাজ থেকেও একাধিক নারীকে এই আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। তারা প্রধানত জানতে চাইছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যারা ‘সিন্ডিকেট’ বা সরকারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী চালান তাঁদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা কেন নেওয়া হলো না?

আগস্টের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শুধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হয়নি, নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের উপরে হওয়া অত্যাচারের বিচার চাওয়া হয়েছে। অতীতের অত্যাচারের ঘটনার বিচার কেন এখনো হলো না তোলা হয়েছে সেই প্রশ্নও।

পাশাপাশি, হাসপাতাল-সহ সর্বত্র যৌন হেনস্থা বন্ধের লক্ষ্যে ২০১২ সালে দিল্লিতে এক নারীকে গণধর্ষণ এবং হত্যার (নির্ভয়া মামলা) পরে ভারতে ২০১৩ সালে যে ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা বিরোধী’ আইন আইন পাস হয়েছিল, তা কেন সব স্তরে বাস্তবায়িত হচ্ছে না প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবায় মহিলাদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু এর কোনো সরকারি হিসাব এখনো নেই কেন সে উত্তরও চাইছেন সমাজ কর্মীরা।

আন্দোলনের গতি সীমিত হয়নি বরং বাড়ছে।  অরিজিৎ সিং-এর মত সুপারস্টার গায়ক প্রতিবাদী গান লিখে ফেলছেন, তো কাল মাঠে নামছেন টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নায়ক-নায়িকারা। এমনকি কলকাতা ময়দানের তিন প্রধান ফুটবল দল – যাদের মাঠের শত্রুতা ঐতিহাসিক – তাদের সমর্থকরাও একজোট হয়ে প্রতিবাদ করছেন চিকিৎসক হত্যার। মিছিল করছেন যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েরাও। আরএ সবই প্রতিদিন নতুন করে চাপ বাড়াচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের উপরে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন