শ্রীলঙ্কা অবশেষে ৫৮০ কোটি বা ৫.৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পুনর্গঠনের সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছে। দুই বছর আগে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হওয়ায় শ্রীলঙ্কা খেলাপির খাতায় পড়েছিল, তবে এই পুনর্গঠন সেই অবস্থা থেকে দেশটিকে বের করে এনেছে।
প্যারিসে বুধবার এই ঋণ পুনর্গঠন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত, জাপান এবং ফ্রান্সের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পুনর্গঠিত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী শিহান সেমাসিংহে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, এই চুক্তি শ্রীলঙ্কার ঋণ সংকট সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় ঋণের সবচেয়ে বড় অংশীদার চীন। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণও শিগগিরই পুনর্গঠন করা হবে।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ ঋণ সংকটে পতিত হয়। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় দেশটি খেলাপি হয়ে যায় এবং তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়, জ্বালানি সংকটে মানুষকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, এবং খাদ্যসংকট দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলা চালায়।
ধীরে ধীরে শ্রীলঙ্কা সংকট সামলে নিয়েছে। আগামী বছর সাধারণ নির্বাচন হবে এবং প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বিভিন্ন বন্ড হোল্ডারদের কাছ থেকে নেওয়া ১৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন।
প্যারিসের এই চুক্তি শ্রীলঙ্কাকে স্বস্তি দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে এক টেলিভিশন ভাষণে জানান, এই চুক্তির ফলে দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধ ২০২৮ সাল পর্যন্ত স্থগিত থাকবে এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বাড়বে। তিনি আরও জানান, ২০২২ সালে পরিশোধযোগ্য বিদেশি ঋণ জিডিপির ৯ শতাংশ ছিল, যা ২০২৭ সালে ৪.৫ শতাংশে নেমে আসবে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠন দেরি হওয়ার প্রধান কারণ ছিল বেইজিংয়ের আপত্তি। চীনের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের বিশেষ ব্যবস্থা চেয়েছিল বেইজিং। চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিশেষ চুক্তিরও প্রয়োজন রয়েছে।
বুধবারের চুক্তির বিস্তারিত এখনও জানানো হয়নি, এবং চীনসহ অন্য ঋণদাতাদের ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কার ঋণ বিষয়ে একধরনের ঐকমত্যে পৌঁছেছিল এক্সিম ব্যাংক।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল শ্রীলঙ্কাকে ঋণ সহায়তা দিয়েছে এবং ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের কিস্তি দেওয়ার সময় বেসরকারি ঋণদাতাদের সঙ্গে চলমান আলোচনার স্বচ্ছতার আহ্বান জানায়।
শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক বন্ড হোল্ডাররা দেশটির ঋণকে ম্যাক্রো-লিংক বন্ডে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভালো করলে এসব বন্ড থেকে বাড়তি সুদ পাওয়া যাবে, তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা চলবে।