ইসরাইল এখন মিডিয়া সোর্সগুলোকে টার্গেট করছে। যাতে বিশ্ববাসী ইসরাইলের বর্ণবাদী ইনচার্জ নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধ বিশ্ব দেখতে না পায়। ফিলিস্তিনিদের ওপর যে গণহত্যা করা হচ্ছে তা বিশ্ববাসীর কাছ থেকে আড়াল করতে ইসরাইল মিডিয়া সোর্সগুলোকে টার্গেটে করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য রাশিদা তালিব।
ফিলিস্তিনের গাজায় আল জাজিরা ও অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শনিবার (১৫ মে) বোমা হামলা চালিয়ে আল জাজিরা এবং এপি’র অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বলে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়।
রয়টার্স জানায়, হামলার আগে ইসরায়েল ওই ভবনের মালিককে সতর্ক করে। এরপর ভবনটি জনশূন্য করা হয়। ইসরায়েল তার বার্তায় জানায়, ভবনটিতে হামাসের সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে। এরপর এমন টুইট করেন রাশিদা। এর আগে রাশিদা তালিব কান্নজড়িত কণ্ঠে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেন। তিনি ইসরায়েলকে বর্ণবাদী রাষ্ট্র হিসেবেও অভিহিত করেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিষদ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কার্টেজ বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও অন্য কর্মকর্তারা বলে আসছেন ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের কি বাঁচার অধিকার রয়েছে?
বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদের এক অধিবেশনে দেয়া ভাষণে গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের জেরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমনটাই প্রশ্ন ছুড়ে দেন এওসি নামে জনপ্রিয় তরুণ এই মার্কিন রাজনীতিবিদ।
এর আগে বুধবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতায় তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন। সংঘর্ষ ‘বিলম্বিত হওয়ার বদলে শিগগির’ শেষ হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ জানান তিনি।
জো বাইডেন সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্যে জানান, ‘সন্ত্রাসী’ হামাসের রকেট থেকে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্যে আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কার্টেজ বলেন, ‘এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ও অন্য কর্মকর্তারা বলেছেন ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং এই অনুভূতি প্রশাসনের সর্বত্রই প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের কি বাঁচার অধিকার রয়েছে? আমরা কি তাতে বিশ্বাস করি? যদি করেই থাকি, তবে এই ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবিচার ও তাদের মানবিক অধিকার লঙ্ঘনে দায় স্বীকার করতে হবে। এটি উভয় পক্ষীয় নয়। এটি ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা।’ এর আগে গাজায় সহিংসতায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মন্তব্যে বুধবার এক টুইটবার্তায় নিন্দা জানান এওসি।
টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘হামাসের কার্যক্রম নিয়েই শুধু বিবৃতির মাধ্যমে- যা নিন্দার যোগ্য এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের স্বীকৃতিতে অস্বীকারের মাধ্যমে বাইডেন এই ভুল ধারণারই পৃষ্ঠপোষকতা করলেন যে ফিলিস্তিনিরাই সহিংসতার চক্রের সূত্রপাত করে আসছে। এটি কোনো নিরপেক্ষ ভাষা নয়। এটি একপাক্ষিক দখলদারিত্বের পক্ষ নেয়া।’
অধিকৃত জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইহুলি বসতি স্থাপনে গত ২৫ এপ্রিল ইসরাইলি আদালতের আদেশের জেরে ফিলিস্তিনিদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে পরপর কয়েক দফা মসজিদুল আকসায় হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত এই সকল হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য বিষয়ক দফতর ইউএনওসিএইএ।
মসজিদুল আকসা চত্ত্বরে মুসল্লিদের ওপর ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে ইসরাইলকে আলটিমেটাম দেয় গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর গাজা থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামাস রকেট হামলা শুরু করে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে শত শত রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমে বেশিরভাগ রকেট ধ্বংস করা হলেও বেশ কিছু রকেট ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে। শুক্রবার পর্যন্ত এতে এক ইসরাইলি সৈন্যসহ আটজন নিহত হয়েছেন।
হামাসের রকেট হামলার পর ইসরাইল সোমবার রাত থেকেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে। শনিবার পর্যন্ত ইসরাইলি বিমান হামলায় ৪০ শিশুসহ অন্তত ১৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।