নাম তার রুজা ইগনাটোভা। বয়স ৪২ বছর। তাকে ‘ক্রিপ্টোকুইন’ নামে ডাকা হয়। তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নাম OneCoin cryptocurrency. এই কোম্পানির মাধ্যমে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণা করে ৪ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন এই সুন্দরী।
এখন এফবিআই-এর মোস্ট ওয়ান্টেড পলাতকদের তালিকায় প্রথম দশেই জায়গা করে নিয়েছেন রুজা ইগনাটোভা। জালিয়াতির অধ্যায়টি ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছিল যখন ইগনাটোভা তার নতুন কোম্পানি OneCoin-এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিলিয়ন ডলার প্রতারণা করতে শুরু করেছিলেন।
২০১৬ সালে, তিনি লন্ডনের ওয়েম্বলি অ্যারেনায় উপস্থিত হন এবং ক্রমবর্ধমান ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে বিটকয়েনের একটি লাভজনক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে OneCoin-কে দাবি করেন।
এর ১৬ মাস পর ২০১৭ সালের অক্টোবরে, ইগনাটোভা বুলগেরিয়ার সোফিয়াতে একটি বিমানে উঠেছিলেন এবং চুরি করা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যান। মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা দাখিল করার আগেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। আমেরিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও রুজার কোনও হদিস খুঁজে পায়নি।
সিএনএন-এর মতে, এরপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি, এফবিআই এখন মরিয়াভাবে রুজা ইগনাটোভাকে খুঁজছে। এফবিআই-এর তালিকায় থাকা ৫২৯ জন পলাতকদের মধ্যে তিনি একমাত্র নারী যিনি শীর্ষ দশে আছেন। এছাড়া তিনি ইউরোপের মোস্ট ওয়ান্টেড পলাতকদের মধ্যে একজন।
জানা গেছে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ইগনাটোভা বুলগেরিয়ার সোফিয়া থেকে গ্রিসের এথেন্সে ভ্রমণ করেছিলেন এবং এর পরে অন্য কোথাও ভ্রমণ করেন।
এফবিআই সার্কুলার অনুযায়ী, তিনি জার্মান পাসপোর্টে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বুলগেরিয়া, জার্মানি, রাশিয়া, গ্রিস অথবা পূর্ব ইউরোপে ভ্রমণ করতে পারেন।
এফবিআই ওয়ান্টেড পোস্টারের নীচে একটি নোট লেখা রয়েছে, “ইগনাটোভা সশস্ত্র বডিগার্ড অথবা সহযোগীদের সাথে ভ্রমণ করে বলে বিশ্বাস। ইগনাটোভা হয়তো প্লাস্টিক সার্জারি করে তার চেহারা পরিবর্তন করেছেন।”
এফবিআই কর্তৃপক্ষের মতে, OneCoin ছিল একটি পিরামিড স্কিম যা লোকেদের প্রতারণা করে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পকেটস্থ করেছিল। কারণ ইগনাটোভা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিল। কর্মকর্তারা বলেছেন, OneCoin অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো কোনও সুরক্ষিত, স্বাধীন ব্লকচেইন-টাইপ প্রযুক্তি দ্বারা সমর্থিত নয়। যা জানার পর মার্কিন কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি, অর্থ পাচারের ষড়যন্ত্রর অভিযোগ এনেছিল।
নিউইয়র্কের শীর্ষ প্রসিকিউটর, মার্কিন অ্যাটর্নি ড্যামিয়ান উইলিয়ামস গত মাসে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ইগনাটোভা এবং তার অংশীদাররা বিলিয়ন ডলার হাতিয়েছে। আসলে, ওয়ানকয়েন সম্পূর্ণ মূল্যহীন ছিল… মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ সংগ্রহের জন্য তাদের মিথ্যা প্রচারগুলো একটি লক্ষ্য নিয়ে সাজানো হয়েছিল।”
ইগনাটোভা একজন জার্মান নাগরিক, কিন্তু তার জন্ম বুলগেরিয়ায়। তার বাবা ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং তার মা ছিলেন একজন শিক্ষক। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপীয় আইন অধ্যয়ন করার পর, ইগনাটোভা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানির পরামর্শক হিসেবে সোফিয়াতে চাকরি পান।