বাবা আমার কি বিয়ে হবে না’—গানের এই লাইনটি তিনি মাঝেমাঝেই গেয়ে উঠতেন। মজার ছলে তিনি গানটি গাইতেন বলে যে কেউ ধারণা করতে পারেন। তবে তাঁর মনে দুঃখ, বেদনা এবং হতাশা লুক্কায়িত ছিল।
তাঁর যে আসলে বিয়ে হচ্ছিল না। জন্মগতভাবে শারীরিক ‘প্রতিবন্ধী’ ছিলেন ৩০ বছর বয়সী মনোজ ঘোষ। গত দুই বছরে বিয়ের জন্য একাধিকবার মেয়ে দেখেছিলেন তিনি। ১৫টির মতো জায়গায় তাঁর জন্য সম্বন্ধ দেখা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ে হয়নি।
একপর্যায়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের বটুন গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণগর এলাকায় মনোজের বাড়ি। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় মনোজের দেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর খবর দেওয়া হয় পতিরাম থানায়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। কী কারণে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
স্থানীয়রা বলেছেন, বারবার বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় মনোজ ভেবেছেন- প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্যই তাঁর বিয়ে হচ্ছে না। অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন।
পরিবার বলছে, জন্ম থেকেই মনোজের ডান হাতে সমস্যা ছিল। কিন্তু তা নিয়েই জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন মনোজ। পড়াশোনা শেষ করেই মনোজ তাঁর বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে হাত লাগান। তাঁর এক ভাইও ছিল।
গত বছর হঠাৎ করেই তাঁর ভাইও আত্মহত্যা করে। এবার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে বলে মনোজও আত্মহত্যা করলেন। বাবা মণি ঘোষ বলেন, ছেলে ছোট থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম। আমরা না থাকলে তাকে কে দেখবে এই জন্য বিয়ে করতে চাইছিল।
পুলিশ বলেছে, দুই বছর আগে থেকেই মনোজ বিয়ে করার জন্য পাত্রী দেখেছে। মনোজের জন্য মেয়ে দেখেছে তাঁর পরিবার। দুই বছরে অন্তত ১৫ জন পাত্রী দেখা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো পাত্রীই মনোজকে বিয়ের জন্য রাজি হয়নি।
সেই হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন মনোজ। আত্মহত্যা করার আগে মনোজ ব্যাগে করে তুলসীগাছ, ধূপকাঠি, গীতাসহ মৃতদেহ সৎকারে যা যা প্রয়োজন সব ভরে রেখে গেছেন।