১১ বছর ধরে কোমায় থাকার পর অবশেষে সাড়া দিলেন এক ভারতীয় নারী। অবাক করার মতো ঘটনা হলেও এটাই সত্যি। ১১ বছর আগে ৪৫ বছর বয়সী ওই নারী গুজরাটের গোধরা জেলার পঞ্চমহল থেকে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান। সেখান থেকে ঠাঁই হয় কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতালে। অবশেষে ওই নারী সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে ফোন যায় তার বাড়িতে।
এরপর স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় গোধরার প্রত্যন্ত গ্রাম ভামাইয়াতে বসবাসকারী তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ওই নারী, তাদের সকলকে চিনতেও পারেন।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে নিজের বাসা ছাড়েন গীতা বারিয়া নামের ওই নারী। সে সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। এরপরে স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাকে ফিরে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি কিছুটা সুস্থ হওয়ায়, তার কাছ থেকে পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দু’দিন আগে কলকাতার ওই মানসিক হাসপাতাল থেকে পঞ্চম হল পুলিশের যোগাযোগ করা হয়। তাতেই জানা যায়, এতদিন কোমায় ছিলেন গীতা। সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চমহল জেলা পুলিশও উদ্যোগ নেয়।
পুলিশ ইন্সপেক্টর প্রবীণ অশোদা বলেন, ‘মানবিকতার দিকটি বিবেচনা করেই গীতার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের পুনর্মিলন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেই লক্ষ্যেই তার পরিবারের সদস্যরা যাতে কলকাতায় পৌঁছাতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে গীতাকে তার গ্রামে ফিরিয়ে আনা হবে।’
জানা গেছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার পাভলভ ইনস্টিটিউটের একজন ডাক্তার পঞ্চমহল জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে বলা হয়, গীতা তার স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়েছেন এবং তার পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত মনে করতে পারছেন।
এরপর এক মুহূর্ত দেরি না করে পঞ্চমহল জেলা পুলিশের তরফ থেকে গীতার বাড়িতে যোগাযোগ করা হয়। সমস্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে গীতার সঙ্গে ভিডিও কলে তার পরিবারের সদস্যদের কথা বলানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ।
পঞ্চমহলের পুলিশ সুপার হিমাংশু সোলাঙ্কি বলেন, ‘হাসপাতারের তরফে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশ গ্রাম ও পরিবারের বিস্তারিত তথ্য যাচাই করে। আমরা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার পর ডাক্তাররা গীতাকে ভিডিও করে তার পরিবাসের সঙ্গে কথা বলায়। সেসময় তারা একে অপরকে চিনতে পারেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১৩ সালে গীতার পরিবার যখন একটি বিয়েতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তখনই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। কিন্তু কীভাবে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং এই বছরগুলোতে কী হয়েছিল তা আমরা এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি।’
গুজরাটের বাড়িতে গীতার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। ১১ বছর পর মায়ের বাড়িতে ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে তাদের সন্তান ও প্রতিবেশীরা। প্রবল আর্থিক কষ্টের মধ্যেও মাকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে চায় তিন সন্তান।