English

17 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

হুমা আবেদিনকে যৌন হয়রানি করেছিলেন এক সিনেটর!

- Advertisements -

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সাবেক একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী হুমা আবেদিন। একটি নতুন স্মৃতিকথা লিখেছেন তিনি। সেখানে দাবি করেছেন একজন সিনেটর তাকে যৌন হয়রান করেছেন। এ ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। তবে কোন সিনেটর তাকে যৌন হয়রান করেছিলেন তার নাম প্রকাশ করেননি। বলেছেন, ওই সিনেটর তাকে তার বাসায় কফি পানের আমন্ত্রণ করেন ২০০০-এর দশকের মধ্যভাগে। ওই সিনেটরের সঙ্গেই তার বাসায় গিয়ে বসেন হুমা। সেখানেই ওই সিনেটর তাকে যৌন হয়রান করেন।
এক পর্যায়ে তিনি হুমা আবেদিনকে চুমু দেন। আরও বেশি অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার কবল থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসেন। হুমা আবেদিনের নতুন বই ‘বোথ/অ্যান্ড: এ লাইফ ইন মাই ওয়ার্ল্ডস’-এ এসব কথা বিস্তারিত লিখেছেন। বইটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ পাওয়ার কথা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান ও বিবিসি।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে যেসব প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছিলেন তার মধ্যে মিস হুমা আবেদিন অন্যতম। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে হিলারি ক্লিনটন যখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তখন হিলারির সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন হুমা আবেদিন। এক সময় তাকে নিজের ‘দ্বিতীয় কন্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন হিলারি ক্লিনটন । ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। ওই সময়ে তার সহযোগী হয়ে কাজ করতেন হুমা। এই সময়ের মধ্যেই ওই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে বলে তিনি বর্ণনা করেছেন।
হুমা আবেদিনের বয়স এখন ৪৫ বছর। তিনি ওই সিনেটরের নাম এবং তিনি কোন পার্টির তা প্রকাশ করেননি। তবে তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটনে একদিন নৈশভোজের পর তিনি ওই রাজনীতিকের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে তারা ওই সিনেটরের বাসার সামনে থামেন। এ সময় হুমা আবেদিনকে বাসায় ঢুকে কফি পানের আমন্ত্রণ জানান ওই সিনেটর। আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন হুমা। লন্ডনের অনলাইন গার্ডিয়ান হুমা আবেদিনের বইটি প্রকাশ পাওয়ার আগেই একটি কপি হাতে পেয়েছে।
তারা লিখেছে, ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে ফ্লোরিডার পাম বিচে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যখন তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে মেলানিয়া কউসকে বিয়ে করেন, সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন হুমা আবেদিন এবং ক্লিনটন দম্পতি। বইটিতে এ প্রসঙ্গে বর্ণনা রয়েছে। এর পরপরই হুমা তার সঙ্গে ওই সিনেটরের আচরণ নিয়ে লিখেছেন। হুমার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। বড় হয়েছেন সৌদি আরবে। লিখেছেন, ‘মনে হয়েছিল যেন আমি আরবে ফিরে গিয়েছি এবং সেখানকার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি’। এরপরে ওয়াশিংটনে ওই ডিনার বা নৈশভোজের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, এতে যোগ দিয়েছিলেন অল্প কয়েকজন সিনেটর ও তাদের সহযোগীরা। তবে এতে হিলারি ক্লিনটন যোগ দেননি। হুমা ওইদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ডিনার শেষে একজন সিনেটরের সঙ্গে বেরিয়ে এলাম। শিগগিরই তার বাসার সামনে আমরা থামলাম। তিনি আমাকে বাসার ভিতরে গিয়ে কফি পানে আমন্ত্রণ জানালেন। ভিতরে প্রবেশ করতেই তিনি আমাকে ঘরে বসে আরাম করতে বললেন।’ তিনি নিজের ব্লেজার খুলে ফেলেন। শার্টের হাতা গুটাতে লাগলেন। কথা বলতে বলতে কফি বানালেন।
‘তারপর হঠাৎ করেই সবকিছু পাল্টে যায়। তিনি এসে বসলেন আমার ডানদিকে। বাম হাতটি আমার কাঁধের ওপর দিয়ে প্রসারিত করে দিলেন। আমাকে চুম্বন করলেন। আমার মুখের ভিতর তার জিহ্বা প্রবেশ করিয়ে দিলেন। ধাক্কা দিতে দিতে তিনি আমাকে একটি সোফার দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি এতটাই হতাশ হলাম যে, আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম। আমার জীবন থেকে ওই ১০ টি সেকেন্ড একেবারে মুছে দিতে চেয়েছি।’
মিস হুমা আবেদিন বলেছেন, এক পর্যায়ে ওই সিনেটরকে বিস্মিত দেখায় এবং তিনি তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। জানিয়েছিলেন, হুমা আবেদিন তার ডাকে সাড়া দেবেন কিনা এটা জানার আগে, তার সঙ্গে তিনি ভুল আচরণ করেছেন। হুমা লিখেছেন, ‘তখন আমার বয়স ২০ প্লাস। আমার এই বয়সের সঙ্গে আমি বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেছিলাম এবং বলেছিলাম- আমি দুঃখিত। এরপরই সেখান থেকে বেরিয়ে আসি এবং বিষয়টিকে যতটা সম্ভব উদাসীনতা হিসেবে দেখার চেষ্টা করি।’
হুমা আবেদিন আরও বলেছেন, এরপরও ক্যাপিটল হিলে কাজ করতে হয় তাকে। সেখানে ওই সিনেটর থেকে কয়েকদিন তিনি দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেন। এর কয়েকদিন পরে ক্যাপিটল হিলে ওই সিনেটরের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। তখন তিনি তার কাছে জানতে চান, এখনও তাদের বন্ধুত্ব ‘আগের অবস্থায়’ আছে কিনা। এরপরই তাদের সঙ্গে যুক্ত হন হিলারি ক্লিনটন। এ নিয়ে হুমা লিখেছেন, যদিও আমি তাকে (হিলারি) এ বিষয়ে কিছু জানাই নি, তবু তিনি মনে করতেন আমাকে রক্ষা করা দরকার। হুমা আবেদিন আরো লিখেছেন, ওই সিনেটরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেন তিনি এবং খুব তাড়াতাড়ি ওই ঘটনা মন থেকে কবর দিয়ে দেন। কারণ, তিনি এ ঘটনা ভুলে যেতে চেয়েছেন। মন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে চেয়েছেন।
তাহলে কেন তিনি পুরনো ক্ষত জাগিয়ে তুলছেন? এ বিষয়ে উত্তর রয়েছে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে বিচারক হিসেবে মনোনীত করেছিলেন ব্রেট কাভানা’কে। কিন্তু তখনই কাভানার বিরুদ্ধে একটি পার্টিতে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন প্রফেসর ক্রিস্টিন ব্লাসি ফোর্ড। কিন্তু কাভানা ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। এ নিয়ে মার্কিন সিনেটে সাক্ষ্য দেন ফোর্ড। তিনি বলেন, ওই ঘটনা নাটকীয়ভাবে তার জীবন পাল্টে দিয়েছে। জীবনের সবচেয়ে দমনমূলক ওই স্মৃতি মন থেকে মুছে দেয়ার জন্য ২০১৩ সালে তিনি থেরাপি নেন। তিনি বলেন, তাকে থেরাপি নিতে হয়েছে, কারণ, ওই ঘটনা যখনই তার মনে হয়, তখনই হৃদয়ে আঘাত লাগে। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। যদিও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে গড়ে উঠা হ্যাসট্যাগ মি টু আন্দোলনে একটি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন কাভানা, তবু তার নিয়োগ নিয়ে নড়চড় করেননি রিপাবলিকানরা। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে তাকে নিশ্চিত করেন তারা।
এই কাহিনী হুমা আবেদিনের মনেও একইভাবে নাড়া দেয়। ফলে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে নিজের ওপর চালানো সেই যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ মাসের শুরুতে বইটির অংশবিশেষ প্রকাশ করে ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন। এই বইয়ে হুমা আবেদিন তার সাবেক স্বামী ডেমোক্রেট দলের নিউ ইয়র্কের সাবেক কংগ্রেসম্যান অ্যান্থনি ওয়েইনারের ওপরকার ক্ষোভের বর্ণনাও দিয়েছেন। তার এই সাবেক স্বামীর ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে যৌন কেলেঙ্কারিতে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন