দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে গেলেও এখনো ভারতে সেই তত্ত্ব অনুসরণ করে চলেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। এমন অভিযোগ করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে মেহবুবা মুফতি এ অভিযোগ করেছেন।
এমন এক সময়ে তিনি এ মন্তব্য করলেন যখন ভারত সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। এ আইন নিয়ে কাশ্মীরে এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
মেহবুবা মুফতি এক্সে শেয়ার করা এক টুইটে বলেছেন, দেশভাগের ৭৭ বছর পরেও বিজেপি হিন্দু মহাসভার দ্বিজাতি তত্ত্বের নীতি ধারণ করে চলছে। তাদের এই বিশ্বাসকে বাস্তবতায় রূপ দিতে ও আমাদের (ভারতীয়দের) মধ্যে আবারো বিভাজন তৈরি করতে তারা নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করছে।
এ সময় তিনি মুসলমানদের আহ্বান জানান, যেন তারা সরকারের কুমন্ত্রণা বুঝতে পারে ও তাদের পাতা ফাঁদে না পড়ে।
জম্মু-কাশ্মীর ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে। এখানকার বেশিরভাগ মুসলমানের ধারণা, সিএএ বাস্তবায়নের পেছনে বিজেপি সরকারের মূল উদ্দেশ্য রাজ্যটিতে মুসলমানদের চালচিত্র পরিবর্তন করে ফেলা।
ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ধর্মকে ব্যবহার করে আগাম নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব ফেলাই বিজেপির প্রধান উদ্দেশ্য। কেননা লোকসভা নির্বাচনের যখন মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি ঠিক তখনই এ আইন কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো।
কাশ্মীরের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মুসলমানেরা বরাবরই বিজেপির কুনজরে ছিল। সিএএ আইনে তাই তাদের কথা বলা হয়নি, এটা নতুন নয়। বিজেপি আগেও এ রকম করেছে। তবে এ কারণে বিজেপির—যারা লোকসভায় ৪০০ আসন পাবে বলে দাবি করছে এবং বলছে যে, রামমন্দির প্রতিষ্ঠার পর তাদের হারার কোনো সুযোগ নেই- অবস্থান আসন্ন নির্বাচনে দুর্বল হতে পারে।
কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সবাদী) নেতা মোহাম্মাদ ইউসুফ তারিগামি বলেন, সিএএ ভারতের সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলোর বিরোধিতা করে।
ইউসুফ তারিগামি বলেন, নাগরিকত্ব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, এলাকাভেদে কোনো বিভাজন মানে না। এটি দেশের সবার অধিকার, যা কারও ব্যক্তিগত বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করে না।
তবে বিজেপি মুখপাত্র আলতাফ ঠাকুর মেহবুবা মুফতির বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যা দেন। তিনি জানান, সিএএ আইনের কার্যকারিতা নিয়ে মানুষ ভালোভাবে অবহিত। জম্মু-কাশ্মীরে কোনো প্রকার সহিংস রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই।
বিল পাশের প্রায় চার বছর পর ১১ মার্চ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হয়।