স্ত্রী মাঝেমধ্যে বা বিচ্ছিন্নভাবে পরকীয়ায় জড়ালে তার স্বামীর থেকে তিনি ভরণপোষণ পাবেন। এ জন্য তার এই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। একটি মামলায় শুক্রবার এমনই রায় দেন দিল্লির হাইকোর্ট।
তবে হাইকোর্টের বিচারপতি চন্দ্রধারী সিং এও বলেছেন, ‘ভরণপোষণ প্রদানে বাধা তখনই প্রযোজ্য হবে যদি স্ত্রী ক্রমাগত বা স্থায়ীভাবে পরকীয়ায় জড়ানোর নির্দিষ্ট প্রমাণ থাকে।’
প্রসঙ্গত, দিল্লির পারিবারিক আদালত কিছুদিন আগেই এক ব্যক্তিকে তার স্ত্রীর ভরণপোষণের জন্য ১৫ হাজার করে রুপি দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ওই ব্যক্তি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
যদিও ওই ব্যক্তি ভরণপোষণের অর্থ স্ত্রীকে প্রদান করার বিরোধিতা করে জানান যে, এই মামলায় একাধিক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে এই নির্দেশের কোনো যুক্তি নেই। ওই ব্যক্তির মতে তার স্ত্রী চরম নিষ্ঠুরতা, পরকীয়ার পরিচয় দিয়েছে এবং স্বামীকে পরিত্যাগ করে অন্য পুরুষের সঙ্গে বসবাস করছে।
পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে হাইকোর্ট ওই ব্যক্তির আবদেন খারিজ করে দিয়েছেন।
বিচারপতি বলেছেন, নিষ্ঠুরতার জন্য কোনো স্ত্রী ভরণপোষণ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না। এমনকি স্ত্রীর নিষ্ঠুরতার জন্য যদি বিবাহ বিচ্ছেদও হয়, তবু তিনি ভরণপোষণ পাবেন।
রায়ের শেষে বিচারপতি বলেন, কোনো ব্যক্তির স্ত্রী, সন্তান বা বাবা-মা যেন অর্থাভাবে না পড়েন, সে জন্যই ভরণপোষণ আইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় সেই দায়িত্ব কাঁধ থেকে নামানোর চেষ্টা করা হয়।
যদিও হাইকোর্ট জানিয়েছে যে ভরণপোষণ না দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতা ও হেনস্থার কোনও জায়গা নেই এ ধরনের মামলায়। এ ধরনের মামলায় বিবাহ বিচ্ছেদ যদি অনুমোদিত হয় নিষ্ঠুরতার কারণে, তবে আদালত স্থায়ী ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে দেয় স্ত্রীয়ের জন্য।
হাইকোর্টের বিচারপতি চন্দ্রধারী সিং বলেন, ‘ভারতের ভরণপোষণ আইন সম্পর্কে এরই মধ্যে বিভিন্ন হাইকোর্ট যে মত পোষণ করেছেন, তা হলো- স্ত্রী যদি নিয়মিত পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান অথবা তার প্রেমিকের সঙ্গে স্থায়ীবাবে বসবাস করেন, সেক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৫ (৪) ধারা প্রযোজ্য হবে।’
ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ধারাটিতে স্ত্রী, শিশুসন্তান ও বাবা-মায়ের ভরণপোষণের কথা বলা হয়েছে। তাতে উল্লেখ রয়েছে, কোনো স্ত্রী যদি স্বামীকে ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন অথবা যথেষ্ট কারণ ছাড়া স্বামীর সঙ্গে থাকতে অস্বীকার করেন, তাহলে তিনি স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণের অর্থ পাবেন না।