পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বড় সফলতা দেখিয়েছে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (Pakistan Tehreek-e-Insaf) সমর্থিত প্রার্থীরা। এখন পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, পিটিআই সমর্থিতরা ১০২ আসনে জয় পেয়েছে। পিএমএল-এন নওয়াজ পেয়েছে ৭৩ আসন। অন্যদিকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (Pakistan Muslim League) পেয়েছে ৫৪ আসন। ২০ আসনে জয় পেয়েছে অন্যান্য। এখন প্রশ্ন উঠেছে যেহেতু দল হিসেবে নির্বাচন করতে পারেনি পিটিআই, তাহলে কী তারা সরকার গঠন করতে পারবে? তাদের জন্য কোন পথ খোলা আছে?
পিটিআই নেতা গহর আলী খান দাবি করেছেন, কারচুপির আগে তারা ১৭০ আসনে জয় পেয়েছেন। যেসব জায়গায় অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে সেখানে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
অন্যদিকে পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ ঘোষণা দিয়েছেন এবারের নির্বাচনে দল হিসেবে জয় পেয়েছে তারা। অর্থাৎ দলীয়ভাবে এত বেশি আসন কেউ পায়নি। তার এমন মন্তব্যের একদিন পর গহর খান এ কথা জানান।
যদি বাস্তবতা মেনে নেওয়া হয় তাহলে নওয়াজ শরিফের দাবি সঠিক। কারণ আইকনিক ব্যাট প্রতীক হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে হয়েছে ইমরান সমর্থিতদের।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট আসন ২৬৬টি। তবে সংরক্ষিত ৭০টিসহ মোট আসন ৩৩৬টি। সব মিলিয়ে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৬৯ আসন। কিন্তু কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় তৈরি হয়েছে জটিলতা। প্রয়োজন হচ্ছে জোট গঠনের। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট হওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো জটিলতা না থাকলেও সমস্যা হচ্ছে স্বতন্ত্রদের বিষয়ে।
এমন জটিল পরিস্থিতিতে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব লেজিসলেটিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সির (পিআইএলডিএটি) সভাপতি আহমেদ বিলাল মেহবুব। তিনি বলেন, প্রকাশিত ফলাফলে ইমরান সমর্থিতরা এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থানে নেই। ফলে পিএমএল-এন অথবা পিপিপি এর মতো বড় কোনো দলের সঙ্গে জোট গঠন করতে হবে তাদের।
তিনদিনের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি ফের পিটিআইয়ে যোগ দেয় তাহলে কী হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যে দলে যেতে চায় সেই দলের অবশ্যই প্রতীক থাকতে হবে। যেটি বর্তমানে ইমরানের দলের নেই।
যদি এসব প্রার্থী ইমরানের দলে যেতে চায় তাহলে প্রথমে তেহরিক-ই-ইনসাফের আন্তঃদলীয় নির্বাচন হতে হবে। তারপর কমিশনের মাধ্যমে দলীয় যে কোনো প্রতীক ফিরে পেতে হবে।
এই প্রক্রিয়া যদি সম্পন্ন হয় তাহলে পিটিআই সংরক্ষিত আসনও পাবে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ৯৪ নম্বর রুলে প্রতীক পাওয়ার শর্ত ব্যাখ্যা করা আছে বলেও মন্তব্য করেন পিআইএলডিএটি প্রধান।
অন্য দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আহমেদ বিলাল মেহবুব বলেন, এমডব্লিউএম বা নির্বাচনে অংশ নেওয়া যে কোনো দলে যেতে পারবে স্বতন্ত্ররা।
যদি ইমরানপন্থিরা এ পথে হাঁটে তাহলে যে দলে তারা যাবে সেই দলের নিয়মনীতি তাদের মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত আসন পাবে তারা। ফলে বর্তমান ফলাফল অনুযায়ী সংরক্ষিত ৭০ আসনের মধ্যে ২৫ থেকে ২৭টি আসন তারা পেতে পারে।
সংরক্ষিত আসন নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্রদের নির্বাচন কমিশনের কাছে হলফনামা জমা দিতে হবে যে আমরা এমডব্লিউএমে যোগ দিচ্ছি।
পরে দলটির প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে জানাবেন যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আমরা গ্রহণ করছি। তবে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার তিনদিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
যদি স্বতন্ত্ররা পিএমডব্লিতে যোগ দেয় তাহলে কী দলটি সরকার গঠন করতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মেহবুব বলেন, সরকার গঠন ও প্রধানমন্ত্রী পেতে হলে একটি দল বা জোটকে অন্তত ১৬৯টি আসন পেতে হবে।
কিন্তু এই প্রয়োজনীয় আসন ইমরানপন্থি জোট কী করে ম্যানেজ করবে বা পাবে। এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিশ্লেষক বলেন, যদি কোনো দলই প্রথম রাউন্ডে ম্যাজিক ফিগার ১৬৯ স্পর্শ না করতে পারে তাহলে পরবর্তী রাউন্ডে যে দল বা জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে তারাই সরকার গঠন ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে পারবে।
তবে ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি কোনো দলে না গিয়ে নিজেরাই জোট করে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মেহবুব বলেন, এক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনের কোনো সিট তারা পাবে না। যদি তারা সংরক্ষিত কোনো আসন নাও পায় তাহলেও তারা বিরোধী দলে থাকতে পারবে। এক্ষেত্রে একজনকে মনোনীত করে জাতীয় পরিষদের স্পিকারের কাছে চিঠি দিতে হবে তাদের।