মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে চার সপ্তাহের চলমান বিক্ষোভে অন্তত ২০১ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে একটি মানবাধিকার সংস্থা। দেশটিতে স্বাধীন ও বিদেশি গণমাধ্যমে রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরও তেহরানের ফাওয়াজ (ছদ্মনাম) নামে এক বিক্ষোভকারীর সাক্ষাৎকার নিতে সক্ষম হয়েছে বিবিসি।
বিবিসি টুডের অনুষ্ঠানে ওই বিক্ষোভকারী বলেন, ‘এবারের চলমান বিক্ষোভ বেশ উত্তেজনাকর এবং একই সঙ্গে আশাব্যঞ্জক। এবার সত্যিকার পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছি আমরা। আমার মনে হয়, লোকজন সহজেই হাল ছাড়বে না। এখন সড়কে নারীদের হিজাব ছাড়াই দেখা যাচ্ছে। সাধারণত প্রায় প্রতিদিনই বিকেল ও সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভ শুরু হচ্ছে। আমরা নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন খুবই উপভোগ করছি। ‘
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার ব্যাপারে ফাওয়াজ বলেন, আপনি যখন সড়কে নামবেন, তখন যে কোনো কিছুই হতে পারে। এমনও হতে পারে, আপনি আর কখনও ফিরে আসতে পারবেন না, অর্থাৎ মারা যেতে পারেন। এমনকি দীর্ঘদিনের জন্যও গ্রেপ্তার হতে পারেন; যেমনটি আমি আগে দেখেছি। আমার ভাগ্য ভালো, আমি শুধু লাঠিপেটার শিকার হয়েছি। কিন্তু এর চেয়ে খারাপ কিছু আমি দেখেছি। এখনকার পরিস্থিতি বেশ চাপের, তবে আশাব্যঞ্জক।
চাপের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য কিনা, সেটি আপনি জানেন না। তবুও এটি আশাব্যঞ্জক। কারণ দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা ফিল্টারিং করার পরও আপনার কণ্ঠস্বর আন্তর্জাতিক স্তরে শোনা যাচ্ছে। আর বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
চলমান বিক্ষোভ কি শুধু হিজাববিরোধী আন্দোলন না আরও বড় কিছু- বিবিসির এমন প্রশ্নের উত্তরে ফাওয়াজ বলেন, হিজাব-সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ে এবারের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে ঠিকই। তবে ধীরে ধীরে আন্দোলনের গতিবিধি মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার দিকে ধাবিত হয়েছে। আমরা সব সময় মানুষের স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার অধিকার চাই। আমরা ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতার পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। এ ছাড়া সত্যিকার অর্থে জনগণের নির্বাচিত ভোটের সরকার চাই, যাঁরা সত্যিই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য
কাজ করবেন।
এদিকে অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) জানিয়েছে, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর দমনপীড়ন সত্ত্বেও এবারের বিক্ষোভে এ পর্যন্ত অন্তত ২৪ শিশুসহ ১০৮ জন নিহত হয়েছেন। সংস্থাটি আরও জানায়, এ ছাড়া দেশটির সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশের জাহেদান শহরে আলাদা বিক্ষোভে আরও ৯৩ জন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন। ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আর সিস্তান-বালুচিস্তানে পুলিশ কর্মকর্তার হাতে কিশোরী ধর্ষণের শিকার হওয়ায় ৩০ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ শুরু হয়।
আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোঘাদাম গতকাল বুধবার বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত কুর্দিস্তানে পরবর্তী হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া। সংস্থাটির হিসাবে হিজাববিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় মাজানদারান প্রদেশে মারা গেছেন ২৮ জন। কুর্দিস্তানে ১৪ জন, গিলান ও পশ্চিম আজারবাইজানে ১২ জন এবং তেহরানে ১১ জন। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনী কয়েকশ মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। যাঁদের মধ্যে নারী ও শিশুরা আছেন।
অন্যদিকে, চলমান বিক্ষোভে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গতকাল বুধবার আরও ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া দেশটিতে দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে ১২৫টি অভিযোগ করা হয়েছে। তেহরানের প্রসিকিউটর জেনারেল আলি সালেহি এ তথ্য জানিয়েছেন।