শ্রীলঙ্কায় বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সাধারণ বিক্ষোভ হয়েছে। বলা হচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকট শুরুর পর থেকে এ বিক্ষোভই প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী হওয়া কর্মসূচি। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে এদিন প্রায় সব কিছুই ছিল বন্ধ।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে সব দল নিয়ে শুক্রবার নতুন প্রধানমন্ত্রীসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়ে আলোচনা করবেন।কিন্তু তাঁর ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদ না ছাড়ার ঘোষণায় অবিচল ছিলেন। এ অবস্থায় অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাঁর।
পুলিশ ও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কায় গণপরিবহন বন্ধ থাকার পাশাপাশি স্কুলে উপস্থিতি ছিল কম। দোকানপাট ও অফিস-আদালত সারা দেশেই বন্ধ ছিল। রাজধানী কলম্বোর স্কুলগুলোর বেশির ভাগই ছিল বন্ধ। স্টেশনের ট্রেনগুলোও থেমে ছিল। কারণ চালকরা সবাই বিক্ষোভে যোগ দেন।
রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর কয়েক শ’ কর্মকর্তা কালো কাপড় পরে এবং কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। কর্মসূচিতে যোগ দেয় ব্যাংক খাতের ট্রেড ইউনিয়নগুলোও।
ব্যাংকে কর্মরত ৩৪ বছর বয়সী সামানথি একানায়েকে বলেন, ‘এই সরকার দেশকে ধ্বংস করেছে। প্রতিদিন দাম বাড়ছে এবং লোকজনের বাঁচার কোনো উপায় নেই। কোনো জ্বালানি নেই। যখন বাড়ি যাই, তখন বিদ্যুৎ থাকে না। রান্নার গ্যাসও নেই। ’
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সবজির দোকান পর্যন্ত বন্ধ ছিল; এমনকি দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য চায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোও বন্ধ ছিল। কলম্বোর মূল বাণিজ্যকেন্দ্র পেট্টাহ এলাকার পাইকারি দোকানগুলো বন্ধ দেখা গেছে। এখানকার কর্মচারীরা বিক্ষোভে যোগ দিয়ে ‘গো হোম গোতা (বাড়ি চলে যাও গোতা)’ স্লোগান দেয়।
আন্দোলনকারীরা শুরু থেকেই পুরো রাজাপক্ষে পরিবারকে রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে বলছে।
শতাধিক ট্রেড ইউনিয়ন বিক্ষোভে যোগ দেয়। এর মধ্যে রাজাপক্ষের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পারামুনার (এসএলপিপি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইউনিয়নও রয়েছে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ গতকাল সরকারি ছুটির দিনের মতো। ’ তিনি জানান, হাসপাতালগুলো শুধু জরুরি সেবা দিয়েছে।
অনাস্থা ভোটের প্রস্তুতি
দেশটির বিরোধী দল এজেবি এবং টিএনএ ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন মন্ত্রিসভার মুখপাত্র নালাকা গোদাহেবা বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এই অর্থনৈতিক সংকটের সমাধানকে আরো কঠিন করে তুলবে। তাই স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতার একটি শক্তিশালী সরকার প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। আর সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে। ’
দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দ্বীপরাষ্ট্রটির জনগণ কয়েক মাস ধরে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের মারাত্মক সংকটে দিন কাটাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যও আকাশ ছুঁয়েছে।