সাপের প্যাঁচের ন্যায় শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এখনো স্বাভাবিক হচ্ছে না। দেশটিতে খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে কেমন আছে শ্রীলঙ্কার মানুষ, এমন প্রশ্ন যেন খেই হারিয়ে ফেলার মতো। খাদ্য সংকট নিয়ে ভয়াবহ তথ্য দিলো শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি বলছে, দ্বীপ রাষ্ট্রটির অর্ধেক পরিবার তাদের শিশুদের খাওয়ানোর পরিমাণ কমাতে বাধ্য হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সেভ দ্য চিলড্রেন এক প্রতিবেদনে সতর্কবার্তা বলা হয়, দেশটির শিশুদের ‘হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম’ হওয়া থেকে বাঁচাতে সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করার দরকার।
২০২১ সালের শেষের সময় থেকে দক্ষিণ এশীয় দ্বীপ রাষ্ট্রটি তার সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। বৈদেশিক রিজার্ভের অভাব ও বিদেশি সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং জ্বালানি সংকটের জেরে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সব শ্রেণিপেশার মানুষ।
২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশটি গত এপ্রিলে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ঋণ খেলাপি হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে সহায়তার জন্য হাত বাড়ায়।
সেভ দ্য চিলড্রেনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শুধু তাই নয় স্থিতিশীল কর্মসংস্থানের ঘাটতিও দেখা দিয়েছে। ফলে পরিবারের ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে অনেকের। খাবার যোগাড় করতেই হিমশিম অবস্থা বেশিরভাগ পরিবারের।
দাতব্য সংস্থাটি ২ হাজার ৩০০ পরিবারকে জরিপের আওতায় এনেছে। এতে দেখা যায়, ২৭ শতাংশ পরিবার বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য নিজেদের খাবার এড়িয়ে যাচ্ছে। ১০টি পরিবারের মধ্যে ৯টিই জানিয়েছে, তারা সন্তানদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে পারছে না।
এদিকে, সম্প্রতি আইএমএফের ঋণ পেতে মরিয়া সরকার আয়কর থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ ও পানির কর বৃদ্ধি করেছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দও কমিয়েছে। এরই জেরে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। গত বুধবার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে স্লোগানও দেন ক্ষুব্ধ লোকজন। এ ঘটনার একদিন পর সেভ দ্য চিলড্রেনের এ প্রতিবেদন প্রকাশ পেল।
বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বো থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে কালুতারা জেলার বাসিন্দা চার সন্তানের মা শশিকলা মধুবন্তী সিলভা।তিনি বলেন, ‘সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে তার সন্তানরা সঠিক খাবার পাচ্ছে না। তিনি জানান, তার স্বামী একজন অটোচালক। অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। তারা আর এসব গাড়িতে চড়েন না। ফলে তার স্বামীর আয় কমেছে। সেকারণে সন্তানদের কম পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন। মাছ, মাংস, ডিম কেনার সামর্থ্য নেই তার।’
সিলভা সম্প্রতি কাছাকাছি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করেছেন। সিলভা বলেন ‘আমি ৯ ঘণ্টার শিফটের জন্য ৯০০ শ্রীলঙ্কান রুপি পাই। দিনের ৯০০ রুপি দিয়ে আপনি আর কী করতে পারেন? কিন্তু আমার কোনো উপায় নেই।’