রাশিয়া যেদিন আক্রমণ শুরু করল, সেদিনই চার্চে গিয়ে গাঁটছড়া বেঁধে দেশের জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন ইউক্রেনের তরুণ জুটি ইয়ারিনা আরিভা আর ভিয়াতোস্লাভ ফারসিন। এক বছর পরও থামেনি সেই যুদ্ধ, ফলে নিজেদের বিয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন নিয়েও ভাবছেন না এই দম্পতি, তাদের মাথায় শুধুই যুদ্ধ আর ধ্বংসস্তূপের দুঃসহ স্মৃতি।
আসলে তাদের বিয়ে করার কথা ছিল গত বছরের মে মাসে, কিন্তু ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া হঠাৎ হামলা শুরু করলে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান তারা। ফলে সেদিনই বিয়ে সারেন, এরপর দুজনেই অস্ত্র হাতে যোগ দেন ইউক্রেনের টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ফোর্সে।
বছর ঘুরে এখনো আকাশ থেকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র পড়ছে ইউক্রেনে, মানুষ মরছে। যুদ্ধের প্রথবার্ষিকীতে বিয়েবার্ষিকী উদযাপনের কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই।
কিয়েভে নিজেদের বাড়িতে আরিভা ও ফারসিন সিএনএনকে বলেন, একটা বছর কেটে গেছে এবং এই একটি বছরের স্মৃতিজুড়ে শুধুই যুদ্ধ।
আরিভা জানান, যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিন আগের একটি স্যুট তিনি কয়েক মাস ধরে পরছেন না, কারণ সেটা তার জীবনের অন্ধকার মুহূর্তের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে।
সিএনএন জানায়, ১০ জনের দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ২৫ বছর বয়সি ফারসিন, যাদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। আর তার যোগ্যতা বলতে সেই ১১ জনের মধ্যে ফারসিনই একমাত্র, যিনি আগে একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চালিয়েছিলেন।
অন্যদিকে আরিভা কিয়েভে টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ইউনিটে ফিরে সাহায্যের চেষ্টা করছিলেন। সিএনএনকে তিনি বলেন, সেই প্রথম রাতে আমি আমার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম, যে রাতে সে প্রথম যুদ্ধের ময়দানে চলে গেল। আমি মনে করি সেটি আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ রাত। আমি তাকে ফোন করতে পারছিলাম না, কারণ তার ফোন বন্ধ রাখতে হয়েছিল।
“আমি ধার্মিক ছিলাম না, কিন্তু সেই রাতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলাম, যাতে ও নিরাপদে ফিরে আসে।”
পরের দেড় মাসের গল্প অস্পষ্ট। ফারসিন তার মিশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বেশিরভাগ চেকপয়েন্টের দেখভাল এবং দ্বিতীয়সারির প্রতিরক্ষা জোরদার করে আসছিলেন। বেশ কয়েকবার রুশ সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করেছেন এবং ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ওই সময়ে তিনি তার অস্ত্র ব্যবহার করেছেন, তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। এ বিষয়ে কথা বলতে তাদের বারণ রয়েছে বলে জানান ফারসিন।
এদিকে আরিভা ওই সময়ে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটি ছোট অফিসে কাজ করেছেন। যুদ্ধের সময়ের সেই অভিজ্ঞতাকে ‘কঠিন’ বলে মনে হয় তার।
আরিভা বলেন, “আমরা যখন বিষয়গুলো কল্পনায় আঁকছিলাম, মনে হচ্ছিল আমরা ব্যাপক শক্তিশালী আর বীরের মতো; কিন্তু সপ্তাহে একবার আমরা গোসল করতাম, সেখানে কোনো শাওয়ার ছিল না এবং পরিবেশ খুব আরামদায়ক ছিল না। ঘুমের অভাব আর খাবারের অভাব ছিল।”
যুদ্ধের ময়দানের সেই সময়ের দিকে এখনো গর্ব আর কোমলতা নিয়েই ফিরে তাকান এই দম্পতি।