তাইওয়ানকে বশে আনার শেষ মন্ত্র যুদ্ধের পথেই হাঁটছে চীন। মার্কিন উস্কানিতে বেঁকে বসা দ্বীপটিতে গত বছরে পরপর দুই দফা মহড়া, গত সপ্তাহে শেষ হওয়া আরেক ভয়ংকর মহড়ার পর থেকেই চীন মোকাবিলা প্রস্তুতি শুরু হয়েছে তাইওয়ানেও।
কুমার প্রশিক্ষকরা যুদ্ধে উচ্ছেদের প্রস্তুতির বিষয়ে ব্যবহারিক পরামর্শ প্রদান করেন। বোমা হামলার পর নিকটতম আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া, জরুরি কোনো স্থানান্তরে কী করতে হবে, সঙ্গে কী নিতে হবে সে বিষয়ে নাগরিকদের জানাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান।
কুমা কর্তৃপক্ষ জানায়, তাইওয়ানের গণতন্ত্র ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে চীন। তারা এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম ‘মানসিক প্রতিরক্ষা’র কাজ করছে। বেইজিংয়ের আক্রমণ কেমন হতে পারে সে বিষয়ে ছড়িয়ে যাওয়া বিভ্রান্তিকর তথ্যের ওপরও গুরুত্বারোপ করছে এই প্রতিষ্ঠান। যুদ্ধ শুরু হলে দ্বীপটিতে বৃষ্টির মতো চীনের ১,০০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ৫০,০০০ জাহাজ নোঙরের লোমহর্ষক গল্পের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে।
তাইপেতে কুমা একাডেমির ক্লাসে অংশ নেওয়া লিন (৪৫) বলেন, ‘যুদ্ধের সম্ভাবনা থাকলে আমাদের প্রস্তুত হওয়া উচিত।’ শুধু সম্মুখ সারির যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করলেই কোনো দেশ মুক্তি পেতে পারে না। কোনো প্রতিরক্ষা কীভাবে করতে হবে তা ৮ ও ১২ বছর বয়সি বাচ্চাদের কী করতে হবে তাও জানা উচিত তাদের। তাইওয়ানের চিকিৎসক লিন ইউহ-টিং বলেন, তার ছুটির দিনে সময় বের করে নিচ্ছেন প্রতিরক্ষার বিভিন্ন নিয়ম শিখতে। যদি চীন সশাসিত তাইওয়ান আক্রমণ করলে তা থেকে বাঁচতে এমন পদক্ষেপ। সারা দিনব্যাপী চলা কুমার প্রশিক্ষণ ক্লাসগুলোর দাম ১,০০০ তাইওয়ানিজ ডলার। শেষ হবে স্বাস্থ্যপ্রশিক্ষণ যেমন, কোনো ক্ষততে টর্নিকেটসহ ব্যান্ডেজ কীভাবে লাগাতে হবে তার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।
মূল স্লোগান-সহ্য কর, টিকে থাক, জয়ী হও
প্রশিক্ষকরা তাদের পাঠদানের সময় সেভিং প্রাইভেট রায়ানের ওমাহা সমুদ্রসৈকতে অবতরণের দৃশ্য, ইউক্রেনের আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। কুমা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ১০,০০০ জনকে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠান যে ক্লাসগুলো নিয়ে থাকে তা বের করার পরই কয়েক মিনিটের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় বলেও জানায় তারা। তাইওয়ানের প্রথম সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি ইউএমসি প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট সাওসহ দ্বীপটির প্রতিরক্ষায় ব্যয় করেছেন অনেক ধনী উদ্যোক্তারা।
গত বছরের আগস্টে তৎকালীন মার্কিন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর বেইজংয়ের বড় আকারের মহড়ার পর দ্বীপের প্রতিরক্ষায় তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাও। অন্তত ৩০ লাখ নাগরিককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উচ্চাভিলাসি পরিকল্পনা রয়েছে কুমা প্রতিষ্ঠানটির।
চলতি গ্রীষ্মে পরিকল্পিত অনলাইন পাঠের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটিকে আরও ত্বরান্বিত করতে চান তারা। কুমা সম্প্রতি নারীদের জন্যও কিছু প্রশিক্ষণ ক্লাস চালু করেছে। পুরুষের তুলনায় নারীরা এতে বেশি অংশ নিচ্ছেন বলে জানায় কুমা।