ভয়াবহ খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে পড়েছে যুক্তরাজ্য। বর্তমানে দেশটির অনেক মানুষ এখন প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য ও জ্বালানি জোগাড় করতে পারছে না। এসবের জোগান পেতে তাদের অন্যের সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। দেশটির অসংখ্য মানুষকে এখন খাদ্য ও ঘর উষ্ণ রাখার পদ্ধতির মধ্যে যেকোনও একটি বেছে নিতে হচ্ছে।
বর্তমানে ব্রিটেনের মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সংকটকাল পার করছে। আশঙ্কার কথা হলো, কেবল এক বছরের ব্যবধানে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে থাকা মানুষের পরিমাণ তিন গুণ হয়েছে।
ব্রিটিশ গবেষণা ফার্ম ‘সিটিজেন অ্যাডভাইস’ এর বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত জ্বালানির ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে পরিবারের অন্যান্য ব্যয়ে। এ কারণে লাখো মানুষ জ্বালানি দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ছে। যুক্তরাজ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমার ব্যাপ্তিও বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির জ্বালানিবিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফজেম। আগামী অক্টোবর থেকে এ সীমা ১ হাজার ৯৭১ পাউন্ডের বদলে সাড়ে ৩ হাজার পাউন্ড হবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে সীমা বাড়ছে তা ২৬ আগস্ট খোলাসা করে বলবে অফজেম। একটি সূত্র বলছে, জানুয়ারিতে এ সীমা আরও বাড়তে পারে।
সিটিজেন অ্যাডভাইসের তথ্য বলছে, এ সীমা বৃদ্ধির আগে থেকেই খাদ্য ও জ্বালানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাওয়া মানুষের পরিমাণ বেশি ছিল। অন্যদিকে শারীরিকভাবে অক্ষম বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছে এমন মানুষের জন্য এ সংকট আরও ভয়াবহ হতে পারে।
গত বছর এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ২৯৭ জন মানুষ সিটিজেন অ্যাডভাইসের কাছে প্রি-পেইড মিটারের বিল দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যের জন্য সহায়তা চেয়েছিল। একই সময়ে চলতি বছর সাহায্যপ্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২ জন অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়েছে ২৩৭ শতাংশ।
সিটিজেন অ্যাডভাইসের হেড অব পলিসি মরগান ওয়াইল্ড বলেন, সহায়তাপ্রার্থীর সংখ্যা এ পরিমাণ বেড়ে যাওয়া সত্যিকার অর্থেই ভীতিকর। এমন মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে, যারা বিদ্যুৎ বাতি জ্বালিয়ে রাখার ব্যবস্থা করবে নাকি টেবিলে পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
যুক্তরাজ্যে জ্বালানির ব্যয় বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আবার ইউরোপে গ্যাসের প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। ফলে দেখা দিয়েছে গ্যাস সংকট।
ব্যয়সীমা বাড়ানোর ঘোষণার ফলে অন্তত পাঁচ লাখ পরিবার জ্বালানি দারিদ্র্যের কবলে পড়বে বলে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাকশন (এনইএ)। কারণ এসব পরিবারের ১০ শতাংশ বাড়তি আয় ব্যয় হবে জ্বালানি খাতে।
সংস্থাটির পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি বিষয়ক পরিচালক পিটার স্মিথ বলেন, কেবল খাদ্য ও জ্বালানির মধ্যে একটি বেছে নেয়া মানুষই যে দারিদ্র্যে পতিত হবে বিষয়টি তা নয়। আরও অনেক মানুষকে খাদ্য ও বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে যেকোনও একটিকে বেছে নিতে হবে, যেমন অক্সিজেন সিলিন্ডার।
তিনি বলেন, জ্বালানি বিলের ওপর সরকারের দেওয়া ৪০০ পাউন্ডের ছাড় ভালো উদ্যোগ, কিন্তু এটি সংকট মোকাবেলায় যথাযথ নয়। আসন্ন শীতে জ্বালানি ব্যয় নির্বাহ করতে না পারলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। কারণ সে সময় বেঁচে থাকার জন্য ঘর উষ্ণ করার ব্যবস্থা করতেই হবে। সেই সঙ্গে খাবারও প্রয়োজন হবে। তাই নতুন প্রধানমন্ত্রীকে খুব দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।