দীর্ঘদিন পর ফের ভারতের সংসদে ফিরে এলো মাস্ক। করোনাভাইরাসের সতর্কতা হিসেবে বৃহস্পতিবার মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ভারতের সংসদের কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকে।
এদিন সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় প্রথমার্ধের অধিবেশনে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শিল্প বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং’দের।
মাস্ক পরে সংসদে আসেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকার এবং নিম্নকক্ষ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। সংসদের প্রত্যেক সদস্যকে ফেস মাস্ক পরা এবং কোভিড বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ও লোকসভার স্পিকার।
এদিন মাস্ক পরে সংসদের অধিবেশনে দেখা যায় সাবেক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন, বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারিকেও।
সাবেক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতিতে মাস পরা খুবই কার্যকর এবং সময়মতো সমস্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাছাড়া মাস্ক পরলে ক্ষতি কিছু নেই বরং বায়ু দূষণের হাত থেকেও আমাদের রক্ষা করবে।’
মনোজ তিওয়ারি বলেন, ‘সংসদের অধিবেশনে প্রবেশের সময়ই আমাদের মাস্ক পরে আসতে বলা হয়েছিল। আমরা সেই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছি।’
যদিও কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশির অভিযোগ ‘লোকসভা এবং রাজ্যসভার স্পিকার সকাল সংসদ সদস্যকে মাস্ক পরার আবেদন জানালেও বিরোধী দলের সাংসদরা তা পালন করেননি। এ থেকেই পরিষ্কার যে কোভিড নিয়ে তারা কতটা সচেতন।’
এরই মাঝে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এদিন লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিবৃতি দেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্য।
অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে লোকসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশেই করোনার আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি দেখে ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। প্রত্যেক রাজ্যকে কোভিড-১৯ এর নতুন রূপগুলোর সময়মতো শনাক্তকরণের জন্য জিনোম সিকোয়েন্সিং বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
‘উৎসব এবং নববর্ষের মৌসুমের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যগুলোকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার জন্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি লোকেদের মাস্ক পরতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদির নেতৃত্বে ভার্চুয়াল এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্য, অসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, ক্যাবিনেট সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, নীতি আয়োগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
ইতোমধ্যেই ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য সরকার। সেই সাথে প্রতিটি জেলা হাসপাতালকে কোভিড রোগীদের জন্য বেড সংরক্ষিত রাখা, বুস্টার ডোজ দেওয়ার জন্য আলাদা করে শিবির খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস) হাসপাতালেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি একসাথে পাঁচজনের বেশি জমায়েত ও ক্যান্টিনে অতিরিক্ত জমায়েত এড়াতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে আগ্রার তাজমহল চত্বরেও।
উল্লেখ্য, চীনে ইতোমধ্যেই নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে করোনা। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চীনের পাশাপাশি ব্রাজিল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, হংকং, তাইওয়ানসহ আরো কয়েকটি দেশেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ।
চীনে নতুন করে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে যে ভ্যারিয়েন্ট দায়ী করা হচ্ছে- সেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন সাব-ভারিয়ান্ট “বিএফ.৭” এর চারটি ঘটনার সন্ধান পাওয়া গেছে ভারতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর এর মধ্যে দুটি গুজরাটের এবং বাকি দুইটি ওড়িশার। স্বভাবতই নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে ভারতেও।
বিষয়টি নিয়ে বুধবারই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠক শেষে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভিকে পল গণমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার এই ভাইরাসটিকে রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।’
মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ভেতরে বা বাইরে ভিড়ের মধ্যে থাকলেও আপনি মাস্ক পরিহিত অবস্থায় থাকুন। এটি বয়স্ক লোকদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’