ভুয়া টিকা–কাণ্ড নিয়ে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গজুড়ে তোলপাড় চলছে। আর এই কেলেঙ্কারির হোতা দেবাঞ্জন দেবের নিত্যনতুন প্রতারণার কীর্তি ফাঁস হচ্ছে। ভুয়া টিকা–কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন বামপন্থীরা। এই প্রতারক চক্রের হদিস বের করতে অবিলম্বে ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিও তুলেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে আজ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে তিনটি পৃথক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। প্রতিটি মামলায় সিবিআই তদন্ত চাওয়া হয়েছে।
এদিকে আজ সকালে কলকাতার রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের মূল ভবন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায় এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়ে বলেছেন, সবেমাত্র একজন দেবাঞ্জনের সন্ধান মিলেছে। আরও অনেক দেবাঞ্জন লুকিয়ে আছে। এবার সেই দেবাঞ্জনদের খুঁজে বের করার জন্য অবিলম্বে সিবিআই তদন্ত করতে হবে।
বিক্ষোভকারীরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেন। গেল সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গে ভুয়া করোনার টিকা দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তৃণমূলের সাংসদ ও অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী গত মঙ্গলবার কলকাতার কসবায় একটি কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেন। এ সময় তাঁকে কোনো সনদ দেওয়া হয়নি। জানানো হয়, মুঠোফোনে পাঠানো হবে টিকার সনদ। কিন্তু সেই সনদ না আসায় সন্দেহ হয় মিমির। পুলিশ ডাকেন তিনি। আটক করা হয় ওই কেন্দ্রের পরিচালক দেবাঞ্জন দেবকে। এরপরই কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে।
পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, নিজেকে একজন আইএএস কর্মকর্তা ও কলকাতা করপোরেশনের যুগ্ম কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুয়া টিকার কেন্দ্র চালাতেন দেবাঞ্জন। সরকারি স্টিকার বসানো গাড়িতে চড়তেন। ছিল সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীও। দেবাঞ্জন ১৩ জনের একটি দল তৈরি করে তাঁদের দিয়ে ভুয়া টিকা দেওয়ার কেন্দ্র পরিচালনা করতেন। দেবাঞ্জনের কসবার দপ্তরে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ভুয়া করোনার টিকা উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে টিকা প্রতারক দেবাঞ্জন দেবের আরও অনেক কুকীর্তির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
এই দেবাঞ্জন নিজেকে শুধু আইএএস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেননি, সংগীতশিল্পীর পরিচয় দিয়ে টালিউডে জাল বিস্তার করেছিলেন। তিনি বলেছেন, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছেন। ছবির জন্য পেয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। প্রকাশ করেছেন গানের অ্যালবাম। টাকা আদায় করেছেন ভুয়া চাকরির নামে। অর্থ আদায় করেছেন সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলে। পরিচয় দিয়েছেন একজন নামী পরিচালকের সহকারী হিসেবে। কলকাতা পৌর করপোরেশনের ভুয়া যুগ্ম কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভারতের পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে ই–মেইল করে টিকাও চেয়েছেন।
আজ দেবাঞ্জনের কলকাতার বাসভবন কসবার মাদুরদহে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু কাগজপত্র, ব্যাংকের ডেবিট কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ। সন্ধান পেয়েছে তাঁর আটটি ব্যাংক হিসাবের।
এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আজও বলেছেন, তৃণমূল নেতা, মন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের মদদ না পেলে প্রতারক দেবাঞ্জনের সৃষ্টি হতো না। এই তৃণমূল নেতারা সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। এবার ওই সারদার পথ ধরে দেবাঞ্জনের মাধ্যমে রাজ্যের সাধারণ মানুষের অর্থ লুট, জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন তাঁরা।
এদিকে আজ সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সচিবালয় নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ওই প্রতারকের কোনো ক্ষমা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সরকার। এত বড় প্রতারকের রক্ষা নেই।