বুশরা মতিনের বয়স ২২ বছর। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকের রাচুর জেলায় জন্ম। প্রখর মেধাবী। কর্নাটকের বিশ্বেশর্যা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত এসএলএন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক ১৬টি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে রেকর্ড সংখ্যক ১৬টি স্বর্ণপদক জয় করেছেন। বলা যায়, ইতিহাসই সৃষ্টি করেছেন বুশরা!
ইন্ডিপেন্ডেন্ট উর্দুকে দেয়া সাক্ষাতকারে বুশরা মতিন বললেন, আমার কল্পনাও ছিল না, এতগুলো স্বর্ণপদক জয় করব। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কখনো টপ পজিশনে যাওয়ার চিন্তা করিনি। কিন্তু প্রথম সেমিস্টারে প্রথম স্থান অর্জন করার পর প্রচুর পরিমাণে পড়ালেখা শুরু করি।’
বুশরা মতিন আরো বলেন, ‘মহান আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত যে, শুধু আমার ব্যাচে প্রথম হয়েছি এমন নয়; বরং বিশ্বেশর্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত কলেজের সব শাখার ভেতর প্রথম স্থান অর্জন করেছি।’
এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনের পক্ষে ১৩টি পদক জয়ের রেকর্ড ছিল, এখন সেটাও ভেঙে গেল!
বিশ্বেশর্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. ক্রীসদপা বলেন, ‘এই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বুশরা মতিনকে স্বর্ণপদক হস্তান্তর করা হবে।’
নিজের সফলতার মূল কারণ সম্পর্কে বুশরা মতিন বলেন, ‘সব সমস্যার সমাধান হয় নামাজের মাধ্যমে। অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজের পর আল্লাহর দরবারে দোয়া আমার সফলতার প্রধান কারণ। আমার সফলতা ও সম্মান দানের জন্য আল্লাহ তাআলার প্রতি অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।’
মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বুশরা মতিন বলেন, ‘আমি মুসলমান ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ করব, তারা নিজেদের মেধার সাথে ভালোভাবে পরিচিত হবেন। অন্যের কথা অনুযায়ী ক্যারিয়ার নির্বাচন করবেন না। আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করে কঠোর চেষ্টা চালাবেন। নিয়মিত নামাজ আদায় করে সফলতার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ তাআলা সহায়ক হবেন।’
স্বর্ণপদক জয়ী বুশরা মতিনের নিজ রাজ্য কর্নাটক এখন হিজাব নিষিদ্ধ ইস্যুতে বিশ্ব সংবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। নিজের হিজাব ও দেশ নিয়ে বুশরা মতিন বলেন, ‘আমি পুরো চার বছর হিজাব পরিধান করে কলেজে যাতায়াত করেছি। হিজাব ও পড়ালেখা পৃথক বিষয়। হিজাব পরিধান করেই আমি ডিগ্রি অর্জন করেছি। হিজাব আমাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার। ভারত একটি সেকুলার রাষ্ট্র। সংবিধান মৌলিক অধিকারের জামিনদার। নিজের ব্যাপারে আমি বলব, ভারতীয় নাগরিক ও কর্নাটকের অধিবাসী হওয়ার কারণে আমি গৌরব বোধ করি।’
সফলতার পেছনে পিতা-মাতার অবদান সম্পর্কে বলেন, ‘আমার পিতা জহিরুদ্দীন একজন সরকারি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। মা শিক্ষিত গৃহিণী। আমার সফলতার পেছনে বাবা-মায়ের সবচেয়ে বেশি অবদান আছে। তারা কখনোই আমার ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করেননি। নিজের স্বাধীন মতো বিষয় নির্বাচন করেছি। আমার ভাই সব প্রয়োজনে সহযোগিতা করেছে।’
নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাস করে অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। সে লক্ষ্যে এখন প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আইএএস অফিসার হয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।’