বিশ্বজুড়ে ব্যাহত হচ্ছে পাম অয়েল উৎপাদন। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ বায়োডিজেল ম্যান্ডেট। ফলে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া এ ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বর্তমানে এটি সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক। সিংহভাগ সরবরাহই আসে এ দুই দেশ থেকে। চলতি বছর এ দুই দেশে পণ্যটির উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। উৎপাদন বাড়লেও সেটি হবে খুবই সামান্য। কারণ হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই দেশে পাম ফলের বেশির ভাগ বাগানই অনেক পুরনো। নতুন বাগানও গড়ে উঠছে না। পুরনো বাগানগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা অনেকটাই ফুরিয়ে এসেছে।
নেতৃস্থানীয় শিল্প বিশ্লেষক থমাস মাইক বলেন, ‘উদ্ভিজ্জ তেলের দাম এ বছর বাড়বে। আর এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে বৈশ্বিক উৎপাদন ঘাটতি।
পাম অয়েল উৎপাদক দেশগুলোর তালিকায় প্রথম ইন্দোনেশিয়া। তার পরই মালয়েশিয়ার অবস্থান। এ দুই দেশে পাম অয়েলের মজুদ অব্যাহত কমছে।’
তথ্য বলছে, গত বুধবার মালয়েশিয়ান বাজার আদর্শ পাম অয়েলের দাম বেড়ে প্রায় এক বছরের সর্বোচ্চে উঠে আসে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয় ৪ হাজার ৭৫ রিঙ্গিতে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এর আগে গত দুই বছর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল পণ্যটির বাজার।
বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে শুক্রবার মালয়েশিয়ান বাজার আদর্শ পাম অয়েলের মে সরবরাহ চুক্তির দাম আগের দিনের তুলনায় ১৮ রিঙ্গিত বা দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৪ হাজার ৮৯ রিঙ্গিতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ চুক্তির বাজারদর বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ।
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় নয় কোটি টন পাম অয়েল রফতানি হয়। এর মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি পাম অয়েল ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি চকলেট, পিজ্জা, প্রসাধনীসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হয়। এছাড়া বায়োডিজেল বা জৈব জ্বালানি তৈরিতেও পাম অয়েলের ব্যবহার ব্যাপক।
থমাস মাইকের দেয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ মৌসুমে চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি দেখবে পাম অয়েলের বৈশ্বিক বাজার। প্রবৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে দুই-তিন লাখ টন।
বাজার বিশ্লেষক দোরাব মিস্ত্রি বলেন, ‘২০২৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ১০ লাখ টন কমে যেতে পারে। মালয়েশিয়ায় উৎপাদন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘নতুন করে পাম বাগান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা খুবই কম। বিদ্যমান বাগানগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় উৎপাদন নিয়ে ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। এ শিল্প খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারও খুব ধীরগতিতে বাড়ছে।’
বিশ্বজুড়ে জৈব জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। মোট ডিজেলের জ্বালানি সরবরাহে জৈব জ্বালানির পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে অনেক দেশের সরকার। এসব জ্বালানি তৈরিতে পাম অয়েলের ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক বেশি বাড়ছে, যা পণ্যটির সরবরাহকে সংকোচনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়া বায়োডিজেল উৎপাদনে পাম অয়েলের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় ব্যাহত হবে। মালয়েশিয়াও বায়োডিজেল তৈরিতে পাম অয়েলের ব্যবহার বাড়াচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস বলছে, ২০২৪ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এল নিনোর মাঝারি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। ফলে শুষ্ক আবহাওয়া ও প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত কমে যাবে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে এল নিনোর প্রভাবে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের ফলন ১৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল।