English

17 C
Dhaka
রবিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
- Advertisement -

প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে কেমন ছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্পর্ক?

- Advertisements -

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে প্রিন্স চার্লস এখন ব্রিটেনের রাজা। তিনি রাজা তৃতীয় চার্লস হিসেবে পরিচিত হবেন। প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর এক সময় ক্যামিলাকে ‘রটওয়েলার’ বলে ডাকা হতো। তিনি পুরোপুরি কখনই ব্রিটেনের মানুষের মন জয় করতে পারেননি। সেই ক্যামিলা চার্লসের বর্তমান স্ত্রী এখন কুইন কনসোর্ট হিসেবে পরিচিত হবেন।

প্রিন্স চার্লসের প্রথম স্ত্রী প্রিন্সেস ডায়ানা ছিলেন একজন জনপ্রিয়, মনোমুগ্ধকর নারী। তিনি ১৯৯৭ সালে প্যারিসে সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান। সে সময় ক্যামিলাকে ব্রিটেনের সবচেয়ে সমালোচিত নারী হিসেবে চিহ্নিত হতে হয়েছিল।

চার্লস ও ডায়ানা ১৯৯২ সালে আলাদা হন এবং ১৯৯৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। সে সময় ক্যামিলার ওপর বেশ চটেছিলেন ডায়ানা। ২০০৫ সালে চার্লস ও ক্যামিলা বিয়ে করেন।

১৯৯৩ সালে একটি গোপনে রেকর্ড করা টেলিফোন কথোপকথন প্রকাশ্যে এলে সেখানে ক্যামিলা চার্লসকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমার জন্য যেকোনো কিছু সহ্য করতে পারবো। এটাই ভালোবাসা। এটাই ভালোবাসার শক্তি’।

রানি এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের ৭০তম বার্ষিকীতে তার ভবিষ্যত অবস্থান সম্পর্কে যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী সন্দেহ অবশেষে দূর হয়ে গেছে সেই ক্যামিলার।

চার্লস ২০ বছর বয়সী ডায়ানাকে ১৯৮১ সালে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে যা কেবল ব্রিটেন নয়, গোটা বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছিল। উইলিয়াম ও হ্যারি নামে দুটি সন্তান থাকা সত্ত্বেও, তাদের সম্পর্ক কয়েক বছর পর অবনতির দিকে যায় এবং রাজপুত্র তার সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে আবারও সম্পর্কে জড়ান।

তবে চার্লসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলেও ডায়ানার সঙ্গে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্পর্ক ছিল অম্ল-মধুর। রানির কাছে ডায়ানা সব সময় ছিলেন একজন ‘ত্যাড়া মেয়ে’। যেখানে ডায়ানা তার শাশুড়িকে ‘দারুণ শ্রদ্ধা’ করতেন।

ডায়ানা বেঁচে থাকতেও এবং তার মৃত্যুর পরও ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ওপর দারুণ প্রভাব পড়ে। সেটি সামলে নিয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হয়েছিল ডায়ানার। ছোটবেলায় তার বছর কয়েক কেটেছিল পার্ক হাউস নামে এক বাড়িতে। এটি ছিল রানির অন্যতম একটি আবাস স্যান্ড্রিংহামের কাছে। এই মেয়েটির রাজ পরিবারে প্রিন্সেস হবার সবরকম যোগ্যতা আছে, ধরে নিয়েছিলেন রানি। যদিও রাজপ্রসাদের সব নিয়মকানুন মেনে চলার মতো তখনও প্রস্তুত ছিলেন না ডায়ানা।

রাজ পরিবারের বিয়ে হলেও বর চার্লসের রাশভারী চরিত্র ছিল ডায়ানার উচ্ছ্বল ও বর্হিমুখী চরিত্রের বিপরীত। ডায়ানা রাজ পরিবারের অসহায় ও বিচ্ছিন্ন বোধ করতেন। বুঝতে পারতেন না তার কাছে প্রত্যাশা কী। প্রিন্স চার্লসের মত রানিও প্রিন্সেস ডায়ানার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে অস্বস্তি বোধ করতেন। বুঝতে পারতেন না কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। কারণ ডায়ানা ও রানির বড় হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্ন।

ডায়ানার মেজাজ-মর্জি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ আচরণ কীভাবে সামলাবেন সেটা বুঝতে পারতেন না রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও। অনেকে ধারণা করতেন, জনমত কীভাবে নিজের দিকে টানতে হয়, সে ব্যাপারটা ডায়ানা ভালো বুঝতেন এবং তা ব্যবহারও করতেন।

ডায়ানা ও চার্লসের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে দেখে অনেকটা বিচলিত ছিলেন রানি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এক্ষেত্রে তার ছেলের ব্যর্থতা এবং পরিণামে এই বিয়ের ব্যর্থতা রাজতন্ত্রের ভবিষ্যতের ওপর একটা বড় ধরনের ধাক্কা নিয়ে আসবে।

সে সময় চার্লস ও ডায়ানার মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটার পর রানি দুজনকে কথা বলতে ডেকে পাঠান এবং তাদের অনুরোধ করেন বিয়ে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। ডায়ানা বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে তার কাহিনী বিশ্বের সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রানি আবার এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর রানি দুজনকেই আলাদা করে চিঠি লিখে জানান, একটাই পথ খোলা আছে-বিবাহবিচ্ছেদ।

তবে চার্লস, ডায়ানা আলাদা হলেও নাতিদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কিন্তু তাদের ডিভোর্সের পর রানি ও ডায়ানার সম্পর্কেও ফাটল ধরে।

ডায়ানার মৃত্যুর পর রানির বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা ও অভিযোগ ওঠে। তবে ডায়ানার শেষকৃত্যের আগের দিন রানি টেলিভিশন ভাষণে পুত্রবধূ সম্পর্ক খোলামেলা কথা বলেন। তার সেই সম্প্রচার ছিল যুগান্তকারী। এতে রানি, ডায়ানার আবেগ এবং সমাজে তার অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

সে সময় বলা হচ্ছিল রানি তার এই ভাষণের মধ্যে দিয়ে রাজতন্ত্রকে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। ডায়ানার মরদেহ নিয়ে কফিন বাকিংহাম প্রাসাদের ফটক অতিক্রম করার সময় রানি তার পুত্রবধূকে শেষ বিদায়ও জানিয়েছিলেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে স্থায়ীভাবে সরে গেছেন প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান। মার্কিন উপস্থাপক অপরাহ উইনফ্রেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিউক অব সাসেক্স হ্যারি তিন দশক আগে তার মা প্রিন্সেস ডায়ানার রাজপ্রাসাদ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, কী ভীষণ রকম নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়ে তার মাকে যেতে হয়েছে, সেই কথা কল্পনাও করতে পারেন না তিনি।

তবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যে ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন তা বোঝা যায়। চার্লস ও ডায়ানার বিয়ে ভাঙার যে শোরগোল ওঠে ঠিক তখন অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রাজ পরিবারে নতুন সদস্য আসলে পরিবারের রীতিনীতি সম্পর্কে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়া উচিত ছিল রানির। যদিও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের কাছে ব্যক্তি পছন্দের প্রাধান্য দেননি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন