পাকিস্তানে একজন বিশিষ্ট মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী ও সাবেক আইনপ্রণেতাকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। আজ রোববার সকালে ইসলামাবাদ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী ইমান মাজারি-হাজিরকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এসময় তাদের সঙ্গে সাদা পোশাকে কয়েকজন মুখোশধারীও ছিল বলে জানিয়েছেন তার মা শিরিন মাজারি। শিরিন মাজারি পাকিস্তানের সাবেক মানবাধিকার মন্ত্রী।
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে এক্স এ দেওয়া এক পোস্টে মাজারি বলেন, `অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করছে। তাদের সিকিউরিটি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেছে এবং গেট টপকে ভেতরে ঢুকেছে।
গ্রেপ্তারের পরে দেওয়া এক পোস্টে মাজারির মা বলেন, `কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল না পুলিশের কাছে। মানা হয়নি কোনো আইনি প্রক্রিয়াও।
পোস্টে তিনি বলেন, `আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনারা কেন এসেছেন। তারা পুরোপুরি ঘরের ভেতরে ঢুকে যায় এবং ইমানকে টেনে নিতে থাকে। আমার মেয়ে রাতের পোশাক পরা ছিল। সে বলছিল আমাকে পোশাকটা পাল্টে নিতে দিন। কিন্তু তারা তারপরও তাকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়।
শিরিন মাজারি ইমরান খান সরকারের পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন। ইমান সহকর্মী আইনজীবী জৈনব জানজুয়া বলেন,‘আমরা শুনেছি ইসলামাবাদ পুলিশ ইমানকে গ্রেপ্তার করেছে। তার ফোন, ল্যাপটপ, মায়ের ফোন, বাড়ির নিরাপত্তা কর্মীর ফোন অবৈধবাবে জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ।’
একইদিন পাকিস্তানি সাবেক আইনপ্রণেতা ও পশতু তাহাফুজ মুভমেন্ট এর সহ প্রতিষ্ঠাতা আলি ওয়াজিরকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এক পোস্টে ইসলামাবাদ পুলিশ জানায়, তাদের দুজনকেই তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তা্র করা হয়েছে এ্বং আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আল-জাজিরা জানায়, পরবর্তী সময়ে মাজারি-হাজিরকে আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে হাত দিয়ে ভিক্টরি চিহ্ন প্রদর্শন করেন তিনি।
একদিন আগেই তারা দুজনই পিটিএম এর একটি মিছিলে অংশ নিয়েছিল। এক্স এ পোস্ট হওয়া একটি ভিডিওতে মাজারি হাজিরকে বক্তব্য রাখতেও দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আপনাদেরকে এমনভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে যেন আপনারা সন্ত্রাসী। কিন্তু আসল সন্ত্রাসীরা আসলে পাকিস্তান সামরিক সদর দপ্তরে বসে আছে।
মানবাধিকার কর্মী উসামা খিলজি বলেন, এই গ্রেপ্তার স্পষ্টতই আইনি প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন। তাকে গ্রেপ্তারের সময় কোনো পরোনায়া দেখানো হয়নি। প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রয়েছে কথা বলার এবং সংবিধান এই অধিকার নিশ্চিত করেছে। তারা একইসঙ্গে তার মা ও নিরাপত্তারক্ষীর ফোন কেড়ে নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান জানায়, এই গ্রেপ্তার আসলে জনসাধারণের বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। এটা বড় এক ছকের অংশ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মাজারিকে অবলিম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তার এই আটক তার বাকস্বাধীনতার অধিকারের লঙ্ঘন।