পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) চেয়াররম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ‘জেল ভরো’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। নিজ দলের একাধিক নেতা ও মিত্রদের প্রতি বর্তমান জোট সরকারের ‘নিপীড়নমূলক’ আচরণের প্রতিবাদস্বরূপ এ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, বুধবার ঐতিহাসিক শহর লাহোর থেকে ‘জেল ভরো’ আন্দোলন শুরু হবে। শুক্রবার জামান পার্কে নিজ বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জানান পিটিআই চেয়ারম্যান। গত বছরের ৩ নভেম্বর পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই জামান পার্কের বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে ইমরান বলেন, ‘আমরা জেল ভরে ফেলবো। তারা (কর্তৃপক্ষ) লুকানোর জন্য কোনো জায়গা খুঁজে পাবে না।’ তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোর পিটিআই বিরোধী।
তারা জেলে ভরার হুমকি দিয়ে আমাদের দাস করে রাখতে চায়। আমরা তাদের সে ইচ্ছা পূরণ করব। মুলতানে নিজ দলের কর্মীরা পুলিশের হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছেন দাবি করে ইমরান খান বলেন, পুলিশ যদি এমন আচরণ করে, তাহলে মানুষের ঘৃণা ছাড়া তারা আর কিছুই পাবে না। পিটিআই নেতা মুসারাত জামশাইদ চিমা বলেন, সরকার যদি আর কোনো পিটিআই নেতাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে, তাহলে আমাদের সঙ্গে দেশের সব মানুষ রাস্তায় নামবে। ইমরান খানকে গ্রেফতার করা কোনোভাবেই সহজ কাজ হবে না। সরকার যদি এ ধরনের কোনো চেষ্টা করে থাকে, তাহলে তা যে কোনো উপায়ে প্রতিহত করতে প্রস্তুত তারা।
পিটিআই কর্মীরা আরো বলেন, তারা কোনোভাবেই ইমরান খানের বাড়ির সামনে থেকে সরবেন না। দলনেতার কাছে পৌঁছাতে হলে আগে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করার মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ বাড়াতে লাহোর হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন ইমরান খান। ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত সে আবেদন খারিজ করে দেন। আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর পিটিআই সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, তাদের দলনেতাকে যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে।
তাই পিটিআইয়ের অসংখ্য নেতাকর্মী ও সমর্থক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই জামান পার্কে ইমরান খানের বাড়ির সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আলভি নতুন সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে আলোচনার জন্য সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজাকে তলব করেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই নির্বাচন কমিশন নিয়ে সমালোচনা করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও নির্বাচন আয়োজন করা হয়নি।
দেশের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে, কোনো বিধানসভা ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী, বিধানসভা ভেঙে যাওয়ার ৯১তম দিনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীরা অবৈধ হয়ে যান। অথচ নির্বাচন আয়োজন করার কোনো উদ্যোগই এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। বিচার বিভাগ যদি সংবিধান বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়, তবে এর মতো বড় বিপর্যয় আর হতে পারে না। গত বছরের নভেম্বরে আগাম নির্বাচনের দাবিতে লংমার্চ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন ইমরান খান। দেশটির পূর্বাঞ্চলে একটি লংমার্চে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তার গাড়িবহরে গুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় ইমরানের পায়ে গুলি লাগে। যদিও এখন তিনি সুস্থ।