পাকিস্তানের সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। খবর দ্য ডন।
তোশাখানা মামলায় পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরানের বিরুদ্ধে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) এ রায় ঘোষণা করা হয়।
খবরে বলা হয়, আর্টিকেল ৬৩ (১) ধারায় ৫ বছরের জন্য ইমরান খানকে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজার নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় দেন।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চ হলেও ইসলামাবাদে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এ ঘোষণার সময় পাঞ্জাবের সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।
শুক্রবারের রায়ের আগে ইসিপির কার্যালয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ, রেঞ্জার্স এবং ফ্রন্টিয়ার কোরের বিপুল সদস্য মোতায়েন ছিল।
রায়ে বলা হয়েছে, ‘মিথ্যা ঘোষণার জন্য’ ইমরানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু হবে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান ক্ষমতায় থাকতে সরকারি তোশাখানার উপহার নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ। এ অভিযোগে গত আগস্টে রেফারেন্স দায়ের করা হয়। ক্ষমতাসীন জোট ‘পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের’ আইন প্রণেতারা জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফের কাছে রেফারেন্স জমা দিয়েছিলেন। স্পিকার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজার কাছে পাঠান।
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ অভিযোগ করে আসছিলেন, ‘ইমরান খান সরকারি তোশাখানার বেশ কিছু উপহার দুবাইতে ১৪ কোটি রুপিতে বিক্রি করেছেন। ’
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, ইমরান খান তোশাখানা থেকে কিনে নিয়ে হীরার অলঙ্কার, ব্রেসলেট, হাতঘড়ি ইত্যাদি দুবাইতে বিক্রি করেন।
এছাড়া ইমরান ক্ষমতায় থাকতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদনে তোশাখানার বিস্তারিত প্রকাশ করার আরজি জানানো হয়। কিন্তু ইমরান খান তখন বলেছিলেন, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এর কারণে এটা প্রকাশ করা যাবে না।
অবশ্য পরে (৮ সেপ্টেম্বর) ইসিপিতে জমা দেওয়া লিখিত জবাবে, ইমরান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার প্রাপ্ত কমপক্ষে চারটি উপহার বিক্রির করার কথা স্বীকার করেন।
আইনে বলা আছে, রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান কোনো দেশ থেকে যদি উপহার পান, সেটা রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা দিতে হবে। তবে তিনি যদি ওই উপহার ব্যক্তিগতভাবে নিতে চান, তাহলে নিলামের মাধ্যমে সেটা কিনে নিতে হবে। এরপর নিলামের অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
যা বলছে পিটিআই: রায় ঘোষণার পরপরই, পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী, ইসিপির বাইরে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জনসাধারণকে ‘তাদের অধিকারের জন্য’ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি ইসিপির এই রায়কে ‘২২ কোটি মানুষের মুখে চপেটাঘাত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, আজ বিপ্লবের সূচনা।
‘ইমরান খানকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে কেবল জনগণ’ মন্তব্য করে এ পিটিআই নেতা অভিযোগ করেন, ‘আজকের রায় প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ লিখেছেন এবং তার দাসদের দ্বারা স্বাক্ষরিত। ’
পাশাপাশি পিটিআই নেতা শাহবাজ গিল বলেছেন, ইমরানকে শুধু একটি আসন থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, রাজনীতিতে নয়। পিটিআই রায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।