অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। আবার সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে সেটি ঠিক কবে নাগাদ হতে পারে তা নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা। তবে সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটিতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। -আল জাজিরা
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির সাথে সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) সদস্যরা। পরে ইসিপি এক বিবৃতিতে জানায়, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত আগস্টে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হয়। দেশটির রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। মেয়াদ শেষ হওয়ার তিনদিন আগে পাকিস্তানের সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করায় আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে সম্প্রতি পাকিস্তানের জাতীয় আদমশুমারি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়েছে।
আর এই কারণে কিছু আসনের সীমা পুনরায় নির্ধারণের কাজ চলছে। যে কারণে সাধারণ নির্বাচন চলতি বছরে অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয় বলে আগেই জানিয়েছিল পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। আল জাজিরা বলছে, গত ৯ আগস্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। সংসদ ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও ইসিপি বলেছে, সর্বশেষ আদমশুমারির পরে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য সময় প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকারের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলছে, তারা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে চায়। তবে দেশটির প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং এর প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কয়েক মাস ধরে ব্যাপক ক্র্যাকডাউনের সম্মুখীন হয়েছেন। আর এই কারণে আনোয়ার-উল-হক কাকারের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির মামলায় গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। তার সেই গ্রেপ্তার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তানে যে অস্থিরতা শুরু হয় তা টানা চারদিন অব্যাহত ছিল এবং এতে কমপক্ষে ১০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু ও বহু সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।
এছাড়া পাকিস্তানের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির সেনা সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) প্রবেশ করে এবং লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে সামরিক বাহিনী ৯ মেকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে এবং সেনা আইনের অধীনে বিক্ষোভকারীদের বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে ইমরান কারাগার থেকে মুক্তি পলেও তার দল পিটিআইয়ের ওপর নেমে আসে ব্যাপক দমন-পীড়ন। সহিংসতা এবং সামরিক স্থাপনায় হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে শত শত পিটিআই কর্মী এবং সিনিয়র নেতাদের কারাগারে বন্দি করা হয়। অবশ্য গত আগস্ট মাসে দুর্নীতির মামলায় ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে পরে কারাদাণ্ডের সেই রায় স্থগিত করে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। যদিও এসব অভিযোগ আগেই অস্বীকার করেছিলেন ইমরান।
এছাড়া দুর্নীতির মামলার রায় স্থগিত ঘোষণা করে ইমরানকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। যদিও গোপন তারবার্তা ফাঁসের ‘গুরুতর অপরাধে’ এখনও ইমরানকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আল জাজিরা বলছে, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও বিরাজ করছে। এছাড়া জ্বালানির ওপর থেকে ভর্তুকি অপসারণ এবং ধীরে ধীরে জ্বালানি ও তেলের শুল্ক বৃদ্ধির মতো বহু অজনপ্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে করে দেশটির পূর্ববর্তী জোট সরকার।
এতে করে পাকিস্তানে রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় এবং দেশব্যাপী বিক্ষোভের সূত্রপাত করে। এর পাশাপাশি পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা উদ্বেগও রয়েছে। কারণ দেশটির উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো নিয়মিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হচ্ছে।