অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলছে, দেশটিতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বর্তমানে ‘জাতীয় সংকটে’ পরিণত হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতার শিকার যারা, তাদের জন্য প্রায় এক বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার খরচ করবে সরকার।
শনিবার নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার রাজপথে নামেন কয়েক হাজার মানুষ। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে এ বছর প্রতি চার দিনে এক নারী প্রাণ হারিয়েছেন সহিংসতার কারণে।
এপ্রিল মাসে একটি ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মারা যান পাঁচ নারী। একই মাসে আরেকটি আলোচিত ঘটনা থেকে উঠে আসে দেশের সংসদের ভেতর ঘটে যাওয়া একটি ধর্ষণের খবরও।
সমাধানের যে পথ দেখালেন প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় ও আঞ্চলিক নেতৃত্বের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠকের পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যানথনি অ্যালবানিজ পারিবারিক সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়া মানুষদের জন্য স্থায়ী অর্থ সাহায্য ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এই খাতে সরকার ৯২৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ব্যয় করবে।
অ্যালবানিজ বলেন, ‘দেশ হিসেবে, সমাজ হিসেবে আমরা কেমন, সেটাই আজ গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু সরকারের নয়, গোটা সমাজের জন্যই একটা বিষয়। এটা সুশীল সমাজের বিষয়, গণমাধ্যমের বিষয়, সবার জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ এটা।’
ইন্টারনেটেও কড়াকড়ি
নতুন আইন প্রণয়ন করে পর্নোগ্রাফিতে ডিপফেক প্রযুক্তির ব্যবহার ও অংশগ্রহণকারীদের সম্মতি ছাড়া পর্নছবি বানানো নিষিদ্ধ করবে অস্ট্রেলিয়া। ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ভিডিওতে আরেকজনের চেহারা বসানো যায়।
২০২২ সালের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত, নিজের সঙ্গীর হাতে খুন হন ৩৪জন নারী, যা এর আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। গোটা দেশে একই সময়ে খুনের হার বেড়েছে চার শতাংশ।
এছাড়া ইন্টারনেটে ‘ক্ষতিকর ও চরমপন্থি পুরুষালী’ আচরণের সমালোচনা করে অ্যালবানিজ ইন্টারনেটে পর্ন ব্যবহারে কড়াকড়ি বাড়ানোর কথা বলেন। সঙ্গে ডিজিটাল দুনিয়ায় নারীর প্রতি সদাচরণ বজায় রাখতেও উৎসাহিত করেন তিনি।
প্রথমে সাড়ে ৬০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার বিনিয়োগ করে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হবে, যা শিশুদের ইন্টারনেটে অনুপযুক্ত কন্টেন্ট থেকে দূরে রাখবে। এই প্রকল্পের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নতুন নিয়ম চালু হবে অনলাইন সংস্থাগুলোর জন্য, যেটি ঠিক করবে দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা পরিচালন সংস্থা বা ই-সেফটি কমিশনারের কার্যালয়।
কিন্তু এই কাজ যে সহজ নয়, তার স্পষ্ট উদাহরণ সাম্প্রতিক একটি মামলা।
অস্ট্রেলিয়ার ই-সেফটি কমিশনার বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ প্রকাশিত একটি পোস্ট নিয়ে আইনি মারপ্যাঁচে পড়েছেন। সেই পোস্টে এক পাদ্রীকে প্রার্থনা চলাকালীন ছুরিকাঘাতের ভিডিও রয়েছে। এক্স-এর তরফে ইলন মাস্ক বলছেন, এই ভিডিও সরানো আসলে ‘সেন্সরশিপ’ বা মতপ্রকাশে বাধা।
প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, ইন্টারনেট কন্টেন্টে নজরদারি যে সত্যিই কঠিন, সে বিষয়ে সরকার অবগত এবং তারা বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না।
অ্যালবানিজ বলেন, ‘সবার জন্য উন্মুক্ত ইন্টারনেটের যে ঠিক কেমন প্রভাব পড়ে, তা ডিজিটাল সংস্থাগুলোর বুঝতে হবে।’