আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রিপাবলিকান পার্টিতে আধিপত্য বিস্তার করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বেশ কিছু জরিপে দেখা গেছে, সুইং অঙ্গরাজ্যগুলোতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প বেশ এগিয়ে রয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক জরিপে দেখা দেখা গেছে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে ৫৯ শতাংশ ভোটার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করে, এক্ষেত্রে বাইডেনকে বিশ্বাস করে ৩৭ শতাংশ। বিভিন্ন মামলার কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও শক্তিশালী হয়েছেন। ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্রেটিকরা কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিক ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এবার তাদের বড় একটি সংখ্যা দলটিকে পরিত্যাগ করছে। এক্ষেত্রে উভয় দলের জন্য আগামী ১২ মাস গুরুত্বপূর্ণ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো মানুষের ফের ওভাল অফিসে ফেরার চেষ্টা ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় জয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর চাপ তৈরি করতেই ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। যেটা সত্যিকার অর্থে কাজেও দিয়েছিল। সম্প্রতি দেশের বাইরেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও তাদের সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব ও তাইওয়ান প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের দৌরাত্ম্য। এই দেশ তিনটি সমন্বিতভাবে একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম ট্রাম্পের চেয়ে দ্বিতীয় ট্রাম্প আরও বেশি সংগঠিত হতে পারেন। ট্রাম্প তার প্রতিশোধ, অর্থনৈতিক সুরক্ষাবাদ ও নাট্যগতভাবে অসামান্য চুক্তির সাধনায় সীমাবদ্ধ থাকবেন না।
নিজ দেশের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে বড় হুমকি। নিজের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করবেন। এক্ষেত্রে রেহাই পাবে না আদালত কিংবা বিচার বিভাগও।
ট্রাম্প যদি আগামী নির্বাচনে জয় পায় তার প্রভাব পড়বে বিদেশেও। চীন ও তার বন্ধু দেশগুলো আনন্দিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এখন অকার্যকর এটা বলার সুযোগ পাবে। ট্রাম্প যদি যুক্তরাষ্ট্রে যথাযথ প্রক্রিয়া ও নাগরিক অধিকার পদদলিত করেন, তাহলে দেশটির কূটনীতিকরা বাইরে ঠিকভাবে কাজ করতে পারবেন না। তখন বিশ্বের দক্ষিণাংশ যুক্তরাষ্ট্রকে ভণ্ড হিসেবে মনে করবে। তখন যুক্তরাষ্ট্র কেবল অন্য একটি শক্তিধর দেশ হিসেবে পরিচিত পাবে।
ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী প্রবৃত্তিও সীমাহীন হবে। তবে চীনের ওপর শুল্ক আরোপ সত্ত্বেও তার সময়ে মার্কিন অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছিল। বর্তমানে ট্রাম্প ও তার লেফটেন্যান্টরা আমদানির ওপর সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্কের কথা ভাবছেন, যা বর্তমান সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি। প্রথম মেয়াদে শুল্ক প্রত্যাহার ও করোনার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট ঘাটতি ও ঋণ বাবদ ব্যয় বেড়েছে। তাই ফের ট্যাক্স প্রত্যাহারে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ছিল। তিনি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন, ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক তৈরিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেসময় ইউরোপের দেশগুলো সামরিকখাতে ব্যয়ও বাড়িয়ে ছিল। চীনকে কেন্দ্র করে মার্কিন নীতি হয়েছিল কঠোর। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গেও ট্রাম্পের সম্পর্ক ছিল উল্লেখ করার মতো।
কিন্তু তার জন্য দ্বিতীয় মেয়াদ হবে অনেক কঠিন। কারণ বিশ্বজুড়ে বড় পরিবর্তন এসেছে। নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষায় সবাই কাজ করে, এতে দোষের কিছু নেই। তবে ট্রাম্পের একটি চুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও আমেরিকার স্বার্থ সম্পর্কে তার বোধ বাস্তবতার দ্বারা সীমাবদ্ধ নয় এবং মূল্যবোধের দ্বারা অসংযত।