জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাকাশে একটি শক্তিশালী রেডিওওয়েভ লেজার শনাক্ত করেছেন। এগুলো ‘মেগামেসার’ নামে পরিচিত। নুতন আবিষ্কৃত মেগামেসারটি পৃথিবী থেকে ৫০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। এটি এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে দূরের রেডিওওয়েভ লেজার।
মার্সিন গ্লোয়াকি অস্ট্রেলিয়ার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত একজন গবেষণা সহযোগী। দুটি গ্যালাক্সির পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে মেগামেসার তৈরি হয়। গ্লোয়াকি বলেন, এটি মিরক্যাটের পর্যবেক্ষণ করা প্রথম হাইড্রক্সিল মেগামেসার।
হাইড্রক্সিল হচ্ছে কিছু রাসায়নিকের গুচ্ছ, যাতে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু আছে। মিলে যাওয়া একাধিক গ্যালাক্সির ভেতরে এটি পাওয়া যেতে পারে।
গবেষক গ্লোয়াকি এক বিবৃতিতে বলেন, দুটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষ হলে তাদের মধ্যকার গ্যাস অত্যন্ত ঘনীভূত হয়ে যায় এবং এ থেকে আলোর ঘনীভূত রশ্মি বের হতে থাকে। গবেষণাদলটি এই লেজারের নাম দিয়েছে ‘এনকালাকাথা’, যা দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু গোষ্ঠীর বান্টু ভাষা ইসিজুলুর শব্দ। শব্দটির অর্থ ‘বিগ বস’!
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি সমীক্ষার প্রথম রাতে নতুন মেগামেসারটি শনাক্ত করেছিলেন। মিরক্যাটের টেলিস্কোপগুলো ব্যবহার করে তিন হাজার ঘণ্টার বেশি সময়ের পর্যবেক্ষণে এটি চিহ্নিত হয়। ‘এটি অবাক করার মতো ব্যাপার যে মাত্র এক রাতের পর্যবেক্ষণেই আমরা একটি রেকর্ডভাঙা মেগামেসার খুঁজে পেয়েছি। টেলিস্কোপটি যে কত ভালো এটি তারই প্রমাণ,’ বলছিলেন গ্লোয়াকি।
দক্ষিণ আফ্রিকার কারু অঞ্চলে অবস্থিত মিরক্যাট টেলিস্কোপটিতে ৬৪টি রেডিও ডিশ রয়েছে। এটি চালু হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। শক্তিশালী টেলিস্কোপটি অতি ক্ষীণ রেডিও আলোর প্রতিও সংবেদনশীল।
মিরক্যাট টেলিস্কোপ হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় নির্মীয়মাণ আন্তর্মহাদেশীয় স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে (এসকেএ) টেলিস্কোপের এক পূর্বসূরি। হাজারো ডিশ এবং ১০ লাখ কম ফ্রিকোয়েন্সির অ্যান্টেনা সংবলিত এই অ্যারেটি বিশ্বের বৃহত্তম রেডিও টেলিস্কোপ হতে যাচ্ছে।
অ্যারেটির ডিশ ও অ্যান্টেনাগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অংশে থাকলেও এগুলো সম্মিলিতভাবে একটি টেলিস্কোপই তৈরি করবে। এর সংগ্রহ এলাকা হবে এক বর্গকিলোমিটার (০.৩৯ বর্গমাইল)। এতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অন্যান্য টেলিস্কোপের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুতগতিতে গোটা আকাশ জরিপ করতে পারবেন।