English

21 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মার্চ ৬, ২০২৫
- Advertisement -

দায়িত্ব নিয়েই হামাসকে যে বার্তা দিলেন ইসরায়েলের সামরিকপ্রধান

- Advertisements -

ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনীর নতুন প্রধান এয়াল জামির দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছেন, হামাসকে পরাজিত করার দেশটির মিশন এখনো সম্পন্ন হয়নি। অন্যদিকে গাজার নাজুক যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে।

এ ছাড়া তেল আবিবে বুধবার সামরিক সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে জামিরের আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া বহুমুখী যুদ্ধে ইসরায়েল জয়ী হতে ‘দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’।

এ বক্তব্য এমন এক সময় এলো, যখন আরব নেতারা গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়েছেন, যা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে।

এ পরিকল্পনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপকভাবে নিন্দিত প্রস্তাবের বিকল্প হিসেবে আসছে, যেখানে গাজাকে দখল করে এর জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসন প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত। কারণ ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করা হামাসের জন্য কোনো ভবিষ্যৎ ভূমিকাকে ইসরায়েল পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছে।

৫৯ বছর বয়সী সাবেক ট্যাংক কমান্ডার জামির বলেন, ‘হামাস নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা খেয়েছে, কিন্তু তারা এখনো পরাজিত হয়নি।মিশন এখনো শেষ হয়নি।’ তিনি এ কথা বলেন, যখন গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।

জামির সদ্যোবিদায়ি সামরিক প্রধান হারজি হালেভির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন, যিনি ৭ অক্টোবরের ঘটনার সময় ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর ব্যর্থতার দায় নিয়ে জানুয়ারিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে তার বাহিনী একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করে, যেখানে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর দেশটিতে চালানো সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা প্রতিরোধে ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থতা’ স্বীকার করা হয়।

উভয় পক্ষের তথ্য অনুযায়ী, হামাসের হামলায় এই হাজার ২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক প্রতিশোধে গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৮ হাজার ৪০৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক।

আরব পরিকল্পনা
এদিকে গাজার যুদ্ধ পুরো ভূখণ্ডকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে এবং চরম মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। আরব লীগের এক সম্মেলনে মঙ্গলবার গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি ‘সামগ্রিক’ পরিকল্পনা গৃহীত হয়, যা একটি তহবিলের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করা হয়েছে।

এএফপির হাতে থাকা পরিকল্পনার একটি খসড়ায় পাঁচ বছরের জন্য ৫৩ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা গাজার পুনর্গঠনে জাতিসংঘের আনুমানিক ব্যয়ের সমান।

তবে চূড়ান্ত ঘোষণায় এই পরিমাণটি উল্লেখ করা হয়নি। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ‘এসব প্রচেষ্টা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনার সঙ্গে সমান্তরালে চলবে’, যা ইসরায়েলি নেতারা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

সম্মেলনে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলকে পিএলওর অধীনে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। এ পদক্ষেপের ফলে ইসলামী দল হামাসকে এক পাশে ঠেলে দেওয়া হতে পারে, কারণ তারা পিএলওর সদস্য নয়।

এ পরিকল্পনা ট্রাম্পের সেই বিতর্কিত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিক্রিয়া, যেখানে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা ‘দখল’ করে এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরিয়া’তে পরিণত করতে পারে এবং ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্দানে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। ট্রাম্পের সেই পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির সিনিয়র পলিসি ফেলো হিউ লাভাট বলেন, নতুন পরিকল্পনাটি ‘ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবের তুলনায় অনেক বেশি বাস্তবসম্মত, কারণ এটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বেশি’। তবে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পিএ মন্ত্রী ঘাসান খাতিব সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কি না, বিশেষ করে এর অর্থায়নের অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক বাধাগুলোর কারণে।

খাতিব বলেন, ‘গাজায় একমাত্র দুটি প্রধান শক্তি হলো ইসরায়েল ও হামাস এবং…তাদের অবস্থান এই পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ইসরায়েলের পক্ষে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আরবদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা কল্পনাতীত। এর কোনো সম্ভাবনা নেই।’

এদিকে হামাস আরব পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেও গাজার নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে তারা কতটা প্রস্তুত, তা স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে ইসরায়েল আরব নেতাদের প্রস্তাবকে বাস্তবতার বিবেচনায় অনুপযুক্ত বলে উল্লেখ করেছে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) ওপর পরিকল্পনাটি নির্ভর করছে বলে সমালোচনা করেছে।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলাতি বলেন, শুক্রবার জেদ্দায় ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি সম্মেলনে এই পরিকল্পনার জন্য মুসলিম দেশগুলোর সমর্থন চাওয়া হবে।

যুদ্ধবিরতির অচলাবস্থা
এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ গত সপ্তাহান্তে শেষ হয়েছে। ছয় সপ্তাহের এই যুদ্ধবিরতির সময় ৭ অক্টোবরের হামলায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ইসরায়েল এই প্রথম ধাপটি এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বললেও হামাস যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির দিকে অগ্রসর হতে চায়।

৭ অক্টোবর আটক ২৫১ জনের মধ্যে ৫৮ জন এখনো গাজায় জিম্মি, যাদের মধ্যে ৩৪ জন নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই নেতানিয়াহু জিম্মিদের পরিবারের চাপের মুখে রয়েছেন, যারা তাদের স্বজনদের মুক্তির জন্য চুক্তি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

হোয়াদ ইয়াহালোমির জানাজায় অংশ নিয়ে ইসরায়েলি নাগরিক ইয়ায়েল লোটেম বলেন, ‘আমার জন্য খুবই কঠিন যে দেশ এখনো জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি। সবাইকে জীবিত ফেরানো সম্ভব ছিল, কিন্তু তা হয়নি।’

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন