রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ গোটা ইউরোপে চরম জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে টানা কয়েক সপ্তাহের গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া। জার্মানি ও ফ্রান্সে জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব রাখে- এমন কয়েকটি ইউরোপীয় নদীর পানির স্তরও নেমে গেছে।
গত মঙ্গলবার স্পেনের সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এ শীতকাল থেকে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর অভ্যন্তর ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ঠান্ডা ও ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গরম করতে পারবে না।
আগামী ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত এ ডিক্রি জারি থাকবে। এতে আরও বলা হয়েছে, ভবনে বাতি জ্বালিয়ে আলোকসজ্জা করা যাবে না, রাত ১০টার পর দোকানের জানালায় আলো জ্বালিয়ে রাখা যাবে না। এছাড়া দোকানগুলোকে ইলেকট্রিক ডিসপ্লের মাধ্যমে ভেতরের তাপমাত্রা সবসময় বাইরে প্রদর্শন করতে হবে বলেও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা স্পেনে নতুন কিছু নয়। দেশটিতে হাসপাতাল ছাড়া অন্যান্য সরকারি ভবনগুলো ইতোমধ্যে ২৭ ডিগ্রি তাপমাত্রার সীমা মেনে চলছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সঞ্চয়ের এ মহাপ্রস্ততি বারবার স্পষ্ট করে মনে করিয়ে দিচ্ছে একটি হুমকির কথা। আর সেটি হচ্ছে- ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর বিশ্বব্যাপী তৈরি হওয়া তীব্র জ্বালানি সংকট।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে- এমন আশঙ্কায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা জ্বালানি ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমানোর বিষয়ে রাজি হয়েছেন। যেমন বার্লিন শহরের প্রশাসন অঙ্গীকার করেছে তারা এখন থেকে ১০ শতাংশ কম জ্বালানি খরচ করবে। এ জন্য শহরের অনেক বিখ্যাত স্থাপনায় রাতের বেলা অন্ধকারেই রাখছে কর্তৃপক্ষ।
ইতালি ও গ্রিসও সরকারি ভবনগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার ২৭ ডিগ্রি সীমা মেনে চলছে। যেসব দোকান এসি চালিয়ে দরজা-জানালা খোলা রাখে, গত জুলাই থেকে সেগুলোর জন্য ১৫০ ইউরো জরিমানার নিয়ম করেছে প্যারিস।
এরই মধ্যেই মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে টানা কয়েক সপ্তাহের গরম ও শুকনো আবহাওয়া। জার্মানি ও ফ্রান্সে জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব রাখে, এমন কয়েকটি ইউরোপীয় নদীর পানির স্তরও নেমে গেছে।
শীতকালে ইউরোপে ঘরবাড়ি উষ্ণ রাখাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সমস্যায় পড়ার ঝুঁকিতে আছে প্যারিস। ফ্রান্সের কফিশপের টেরেসগুলো উষ্ণ করার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বার্লিন শীতকালে সরকারি দফতর ও স্কুলের তাপমাত্রা কমানোর চিন্তা করছে। এছাড়া দেশটি সরকারি কর্মকর্তারা যেন দিবালোকের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য কাজের রুটিনেও পরিবর্তন আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে দেশটির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট দলের ডেপুটি পার্লামেন্টারি নেতা জেনস স্পান।
অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রের তুলনায় স্পেন রাশিয়ার জ্বালানির ওপর কম নির্ভরশীল। এমনকি রাশিয়া যদি পুরোপুরি গ্যাস পাঠানো বন্ধ করে দেয়, তাহলেও টিকে থাকতে পারবে এ দেশটি। ইইউজুড়ে ১৫ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও, স্পেনকে কেবল সাত শতাংশ সাশ্রয়ের কথা বলা হয়েছে।