২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে জঙ্গি হামলার ব্যাপারে বছরব্যাপী তদন্ত/শুনানী আলোকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সিলেক্ট কমিটি ১৯ ডিসেম্বর সোমবার বিচার বিভাগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের তথ্য সাবমিট করেছে। এই রিপোর্ট তৈরী করা হয় সহস্রাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপ, সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তার সাক্ষ্য, হামলার আগে, পরে এবং চলমান অবস্থায় ট্রাম্প এবং ট্রাম্পের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাগণের মধ্যে ই-মেল, টেক্সট চালাচালির ডক্যুমেন্ট আলোকে এই সুপারিশ মালা তৈরী করা হয়েছে। সিলেক্ট কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিচার বিভাগ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করবে কিনা তা নির্ভর করছে এটর্নী জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডের ওপর।
সোমবার অপরাহ্নে সিলেক্ট কমিটির চূড়ান্ত বৈঠকের সময় দীর্ঘ এই তদন্তের একটি সারমর্মও প্রস্তুত করা হয়, যা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ৬ জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে হামলার সময় যারা সেখানে ছিলেন অর্থাৎ নিরাপত্তা রক্ষী, কংগ্রেসনাল স্টাফ, কংগ্রেসম্যান, হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তা, ট্রাম্পের শীর্ষ কর্মকর্তাগণের বক্তব্য শোনা হয়েছে গণমাধ্যমে সরাসরি প্রচারিত গণশুনানীতে। সে সময় তথ্য-উপাত্তও উপস্থাপন করা হয় পর্যায়ক্রমে। সেই শুনানীর সমাপ্তি ঘটে গত অক্টোবরে ট্রাম্পকে নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যদিয়ে।
সিলেক্ট কমিটিতে উভয় দলের কংগ্রেসম্যানরাই ছিলেন। সোমবার এই সুপারিশমালা তৈরীর পর কমিটির প্রভাবশালী সদস্য (ডেমক্র্যাট) এডাম সিফ মনে করেন যে ট্রাম্প গুরুতর অপরাধ করেছেন নানাভাবে। এজন্যে ট্রাম্পকে বিচারে সোপর্দ করা উচিত। সিলেক্ট কমিটির এমন সুপারিশ বিচার বিভাগে সাবমিটের তথ্য জানার পরই ডনাল্ড ট্রাম্প তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তার ‘ট্রুথ সোস্যাল পেজ’এ। ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন যে, দলীয় কমিটি দ্বারা ডেমক্র্যাটরা তার বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ নামা তৈরীর চেষ্টা করেছে। ট্রাম্প লিখেছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমি প্রার্থী হলেই জিতে যাবো। এজন্যে ওরা আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যাচার চালিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে। ট্রাম্প লিখেছেন, আমেরিকানরা ভালো করেই জানেন যে, ৬ জানুয়ারির দাঙ্গা বন্ধে আমি ২০ হাজার সৈন্য প্রেরণের চেষ্টা করেছি। আমি সে সময় টিভির মাধ্যমে সকলকে আহবান জানিয়েছি ঘরে ফিরে যাবার জন্যে।
ট্রাম্প লিখেছেন, সর্বসাধারণ অবহিত রয়েছেন যে ডিবিআই (ডেমক্র্যাটিক ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) চেষ্টা চালাচ্ছে আমাকে সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীতা থেকে সরিয়ে দিতে অথবা দূরে রাখতে। কারণ, তারা জানে যে আমি জয়ী হবো। আর এটা করা হচ্ছে আগের ইমপিচমেন্ট ট্রায়ালের মত। এটিও দলগত একটি প্রচেষ্টা, যার মধ্যদিয়ে আমাকে কোনঠাসা করার চেষ্টা চলছে এবং একইসাথে রিপাবলিকান পার্টির ইমেজকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার অপকৌশল মাত্র। ট্রাম্প আরো লিখেছেন, ভেবে দেখুন, উগ্র বামপন্থি ডেমক্র্যাট(কম্যুনিস্ট)রা আমার গত নির্বাচনের প্রচারণার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করেছে, ফিসা (ফরেইন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস) কোর্টে মিথ্যা বলেছে, কংগ্রেসের কাছে মিথ্যা বলেছে, দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে আমাদের দেশে আক্রমণের অনুমতি দিয়েছে, আফগানিস্তানে আমাদেরকে বিব্রত করেছে, আমাদের জ্বালানীর স্বাধীনতাকে বিকিয়ে দিয়েছে, ৬ জানুয়ারিতে দাঙ্গা প্রতিরোধে আমি ১০ হাজারের অধিক সৈন্য নিয়োগের সুপারিশ করেছিলাম কিন্তু তারা ব্যবহার করেনি, গত নির্বাচনে জালিয়াতি, প্রতারণার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনীহা প্রকাশ করেছে। ভোট চুরির নির্বাচনের ফলাফল পাল্টিয়ে দেয়ার ঘটনার জন্যেই জনরোষ তৈরী হয়েছিল।
গত নির্বাচনে ব্যালট জালিয়াতির ঘটনার সাথে এফবিআই/ফেসবুক/ টুইটার এবং বাইডেন প্রশাসন জড়িত ছিল। এমন পোস্টিংয়ের কয়েক মিনিট পর তৃতীয় দফায় ট্রাম্প আরো লিখেন, আমি হচ্ছি অন্যতম একজন যার বিরুদ্ধে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং দলীয় পক্ষপাত দুষ্ট ‘আনসিলেক্ট কমিটি’র ভিকটিম হয়েছি। ট্রাম্প তার পোস্টিংয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পুত্র হান্টার বাইডেনকেও আক্রমণ করেছেন। হান্টার দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকা সত্বেও বাইডেন প্রশাসন কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না-সে প্রশ্নের অবতারণা করেছেন ট্রাম্প।