গত বছর প্রশান্ত মহাসাগরে বিশাল আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণটি বিশ্বের সম্পূর্ণ অন্য প্রান্তে ১৮ হাজার কিমি দূরে আটলান্টিক মহাসাগরের তলায়ও অনুভূত হয়েছিল।
২০২২ এর ১৫ জানুয়ারির হুঙ্গা-টোঙ্গা হুঙ্গা-হাপাই আগ্নেয়গিরির প্রচণ্ড বিস্ফোরণের বিপর্যয়কর অগ্ন্যুৎপাত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে চাপের তরঙ্গ পাঠিয়েছিল। ওই তরঙ্গ সমুদ্রপৃষ্ঠেরও সংস্পর্শে আসে এবং ৫ হাজার মিটার নিচে সাগরতলে রাখা ৫০টি অত্যন্ত সংবেদনশীল সিসমোমিটারকে সক্রিয় করে।
এটি ছিল আজোরেস-মাদেইরা-ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলে স্থাপিত যান্ত্রিক নেটওয়ার্কে ধরা পড়া বেশ কয়েকটি কৌতুহলকর ঘটনার অন্যতম।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী মূলত ভূমিকম্প শনাক্ত করার জন্য স্টেশনগুলো স্থাপন করেছিলেন। এর লক্ষ্য হচ্ছে স্থলগতির সংকেত ব্যবহার করে পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের চিত্র তৈরি এবং সাগরতল থেকে বড় ধরনের ম্যাগমার উত্থান সনাক্ত করা। ম্যাগমা বা গলিত পাথর লাভার আকারে সাগরপৃষ্ঠে উঠে এসেই পর্তুগাল এবং স্পেন দ্বীপপুঞ্জের অনেক দ্বীপ গড়ে উঠেছিল।
বায়ুমণ্ডল-সমুদ্রের এই সংযোগের মাধ্যমে এত বেশি দূরের অগ্ন্যুৎপাত চিহ্নিত হবে তা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশিত ছিল না। তেমনি অপ্রত্যাশিতভাবে ধরা পড়ে তিমির কলরব ও মহামূল্যবান শত শত গাড়ি নিয়ে আগুনলাগা একটি পণ্যবাহী জাহাজের ডুবে যাওয়ার প্রচণ্ড শব্দ।
আগ্নেয়গিরির সংকেতটি বিশেষ করে আকর্ষণীয় কারণ এটি দারুণভাবে প্রাকৃতিক ওই বিশাল ঘটনার শক্তি এবং নাগালের চিত্র তুলে ধরেছে।
হুঙ্গা-টোঙ্গা এ পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতার ছাইয়ের মেঘ তৈরি করেছিল। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অর্ধেকেরও বেশি পথ অতিক্রম করে এর পাথুরে কণা।
তবে ওই বিস্ফোরণের শক্তি বায়ুমণ্ডলকেও কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সব দিকে ছড়িয়ে দিয়েছিল ‘ল্যাম্ব ওয়েভ’‘ নামে পরিচিত তরঙ্গ। এগুলো হলো বায়ুতে সৃষ্টি হওয়া শক্তিশালী তরঙ্গ যা শব্দের গতিতে চলে। এর গতিপথ স্থির হয় ভূপৃষ্ঠের কাঠামোর ভিত্তিতে।