English

17 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

জলবায়ু পরিবর্তন: ক্ষতিপূরণ দেবে কোন কোন দেশ?

- Advertisements -

রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রা চীনে। দাবানলের কারণে সুইজারল্যান্ডের গ্রামের বাসিন্দারা বাধ্য হচ্ছে অন্যত্র সরে যেতে। খরায় পুড়ছে স্পেনের ফসল। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষয়ক্ষতি যখন বাড়ছে, তখন বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে একটি বিতর্ক জোরদার হচ্ছে: ক্ষতিপূরণ দেবে কারা?

গত সপ্তাহ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল এই প্রশ্নটি। এই আলোচনায় বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দুটি দেশ একত্রে কাজ করার উপায় বের করার চেষ্টা করেছে। দুবাইতে আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮-এর আগে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন থেকে শুরু করে জলবায়ু অর্থায়নে কাজের সুযোগ সৃষ্টি চায় দেশ দুটি।

চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দেশটিতে ক্রমাগত কার্বন নির্গমন বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদানকারী গোষ্ঠীতে যোগদানের চাপ বাড়ছে।

বেইজিংয়ের আলোচনায় মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরি বলেছেন, ৩০ নভেম্বর কপ২৮ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে আগামী চার মাস দুই দেশ জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর একটি দেশের এক কূটনীতিক বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ ও ছোট দ্বীপের উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাতারে এখনও চীন, ব্রাজিল বা সৌদি আরবের মতো দেশকে তুলে ধরার পক্ষে যুক্তি দেওয়া কঠিন।

জলবায়ু তহবিলের সবচেয়ে বড় দাতা এখন ইইউ। ব্লকটির পক্ষ থেকে দাতা দেশগুলোর সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

জলবায়ু অর্থায়ন হলো বিশ্বের ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমানো এবং একটি উষ্ণ ও কঠোর পৃথিবীতে মানিয়ে নেওয়ার জন্য যে সহযোগিতা প্রদান করা হয়, সেই তহবিল।

এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েক ডজন ধনী দেশ এই জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নে প্রতিশ্রুতি অনুসারে অর্থ পরিশোধ করেছে। দাতা দেশগুলোর তালিকা ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে নির্ধারিত হয়েছে। ওই সময় চীনের অর্থনীতি ইতালির চেয়ে আকারে ছোট ছিল।

এখন বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে এই তহবিলে অর্থ প্রদানের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন উল্লেখ করেছেন, চীনের অবদান জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে।

চীনের মতো এমন চাপের মুখে রয়েছে কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। মাথাপিছু জিপিডির নিরিখে দেশ তিনটি বিশ্বের ধনী দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে।

এখন পর্যন্ত চীন নিজেকে ধনী দেশগুলোর কাতারে রাখার বিষয়টি ঠেকিয়ে আসছে। মঙ্গলবার জন কেরির সঙ্গে বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং জোর দিয়ে বলেছেন, উন্নত দেশগুলোর উচিত তাদের জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়া। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখতে পারে।

চীনের এই অনমনীয় অবস্থান উদ্যোগটির বাস্তবায়নে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হাজির করছে। জাতিসংঘের দাতা দেশগুলোর তালিকা পরিবর্তন করতে হলে আন্তর্জাতিক সম্মতির প্রয়োজন হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইইউ কর্মকর্তা বলেছেন, চীন ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর পক্ষ অনেক বেশি বাধা আসছে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সমর্থকরা বলছেন, ২০২৫ সালে জাতিসংঘের আরেকটি বড় আকারের জলবায়ু তহবিলের উদ্যোগ শুরু হওয়ার আগে দাতা দেশগুলোর সম্প্রসারণ প্রয়োজন। ওই তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা ও তাতে কারা অর্থ প্রদান করবে-এসব বিষয় নিয়ে দেশগুলোর আলোচনার প্রয়োজন।

ছোট দ্বীপ দেশগুলোর একটি জোটের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত পা’ওলেলি লুটেরু বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে অর্থ প্রদানে সক্ষম সব দেশের অবদান রাখা উচিত।

তার মধ্যে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দরিদ্র ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে কারা এই তহবিল পাবে।

কারা দায়ী?

জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিল যে নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে তা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর দায়িত্ব বেশি। কারণ শিল্প বিপ্লবের পর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের মাধ্যমে বিশ্বকে উষ্ণ করে তোলার ক্ষেত্রে তাদের বড় ভূমিকা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন যেকোনও দেশের তুলনায় বেশি। কিন্তু এখন দূষণ সৃষ্টির নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ হলো চীন।

কপ২৮ সম্মেলনে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বে দেশগুলো। এই সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য নতুন একটি তহবিল চালুর লক্ষ্য রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব দেশের অনেকগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে ভুগছে।

গত বছর দীর্ঘ দিন পর এই তহবিলের প্রতি বিরোধিতা প্রত্যাহার করে ইইউ। কিন্তু তারা শর্ত দিয়েছে আরও একটি গোষ্ঠী এই তহবিলে অর্থ প্রদান করবে। তবে কোন কোন দেশ তা করবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে এমন অর্থ প্রদানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলে অবদান রাখতে বাধ্য নয় এমন কিছু দেশ- যেমন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং কাতার অর্থ প্রদান করেছে। অন্যরা বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতা প্রদান শুরু করেছে।

২০১৫ সালে চীন সাউথ-সাউথ ক্লাইমেট কোঅপারেশন তহবিল চালু করেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা করা এর উদ্দেশ্য। থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা ইথ্রিজি-এর তথ্য অনুসারে, প্রতিশ্রুত ৩১০ কোটি ডলারের মাত্র ১০ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে।

এই অর্থ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে চীন যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে তার অতি ক্ষুদ্রাংশ। তেলের পাইপলাইন ও বন্দর নির্মাণে হাজার কোটি ডলার ব্যয় করছে দেশটি।

এমন উদ্যোগের মাধ্যমে জলবায়ু তহবিলে অবদান রাখতে বাধ্য নয় এমন দেশগুলো ভূমিকা রাখতে পারছে। যদি তা জাতিসংঘ তহবিলের বাইরে এই সহযোগিতা করা হয় তাহলে এই বিষয়ে তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা কম থাকে। ফলে অর্থ আসলে কোথায় যাচ্ছে তা জানা কঠিন হয়ে পড়ে।

ইথ্রিজি-এর সিনিয়র নীতি উপদেষ্টা বাইফোর্ড সাং বলেছেন, জলবায়ু তহবিলের চীন যদি কোনও প্রস্তাব দেয় তাহলে তা হবে বেইজিংয়ের জন্য লাভজনক পরিস্থিতি। এতে চীনের কূটনৈতিক প্রভাব বাড়বে এবং জলবায়ু তহবিলে পশ্চিমা দাতাগুলোর ভূমিকা বাড়ানোর জন্য চাপ তৈরি করবে।

এখন পর্যন্ত জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থায়ন পাওয়া নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক দেশ হতাশ। তারা অর্থায়নের নতুন উৎস খুঁজছে। বার্বাডোজের নেতৃত্বাধীন ব্রিজটাউন ইনিশিয়েটিভ বহুমুখী উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে জলবায়ু প্রকল্পে আরও অর্থায়নের জন্য চাপ দিচ্ছে। অপর দেশগুলো নৌ পরিবহনে কার্বন ডাই-অক্সাইড কর বসানোর প্রস্তাব সমর্থন করছে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন