জাপানে জন্মহার উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে। তাই দেশটির দম্পতিরা বাচ্চা নিলেই বিপুল অর্থ দেবে জাপান সরকার। দম্পতিকে পাঁচ লাখ ইয়েন বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন লাখ ৭৮ হাজার টাকা দেবে জাপান সরকার। এত দিন চার লাখ ২০ হাজার ইয়েন করে দেওয়া হতো।
সমালোচকেরা বলছেন, জাপানে যে হারে জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে এবং আয় একই জায়গায় থমকে আছে বা কমেছে, তাতে জাপানিরা সন্তানের খরচের ধাক্কা সামলাতে চাইছে না।
অনেকে বলছেন, কিছু অর্থ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। অতীতেও এই ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল এবং এবারও হতে পারে।
আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে এই নতুন প্রস্তাব চালু হওয়ার কথা।
পরিস্থিতি খারাপ
জাপানের জনসংখ্যা কমছে। ২০১৭ সালে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৫৭ লাখে। করোনার আগে একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছিল, এই শতকের শেষে জাপানের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে পাঁচ কোটি ৩০ লাখে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে জাপানে মানুষ বেশি বয়সে বিয়ে করছে। তাদের কম বাচ্চা হচ্ছে। এর প্রধান কারণই হলো আর্থিক চিন্তা। করোনা, ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতির ফলে সমস্যা বেড়েছে বই কমেনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা সংখ্যাতত্ত্বে দেখা গেছে, এই বছর প্রথম ছয় মাসে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৯৪২টি শিশুর জন্ম হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কম। মন্ত্রণালয় মনে করছে, গোটা বছরে শিশুর জন্মের সংখ্যা আট লাখের কম হবে। ১৮৯৯ সালের পর থেকে যা কখনো হয়নি।
খরচের ধাক্কা
বাচ্চাকে বড় করার জন্য যে অর্থ লাগে তা বিপুল বলে জাপানিরা মনে করছেন। টোকিওর গৃহবধূ আয়াকো জানিয়েছেন, সরকারের দেওয়া অর্থ তিনি পেয়েছেন। তার একটি ছেলে আছে। কিন্তু সরকারের দেওয়া টাকায় তিনি হাসপাতালের খরচ পুরোপুরি মেটাতে পারেননি।
সংবাদপত্র মাইনিছি জানিয়েছে, জাপানে সিজারিয়ান বাচ্চার জন্ম দিতে গেলে গড়ে চার লাখ ৭৩ হাজার ইয়েন খরচ হয়।
আয়াকো বলেছেন, ‘আমরা আরেকটি বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু আমি ও আমার স্বামী মিলে আলোচনা করে দেখলাম, আর্থিক দিক দিয়ে তা সম্ভব নয়। ৮০ হাজার ইয়েন বাড়তি দিলে সুবিধা হবে ঠিকই, কিন্তু তাতেও খরচ মিটবে না। তাই আমরা বাস্তবতাকে মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটা বাচ্চাকে বড় করতে প্রচুর খরচ হয়। ‘
আয়াকো জানিয়েছেন, করোনার পর তার পরিবারের আয় কমেছে। খরচ বেড়েছে। খাবার ও গাড়ির তেলের দাম খুবই বেড়ে গেছে। ফলে তারা আর খরচ বাড়াতে চাইছেন না।
এই অবস্থায় জাপান সরকারের নতুন উদ্যোগ সফল হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।