বেইজিংয়ের দৃষ্টিতে লাই চিং-তে একজন ‘ট্রাবলমেকার’ বা সমস্যা সৃষ্টিকারী এবং বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী। এখন তিনিই হবেন তাইওয়ানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ডের অংশ মনে করে। দ্বীপটিকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্রীকরণের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে পরিণত করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যদিও তার হুমকি বিগত বছরগুলোতে খুব একটা কাজে আসেনি।
বরং ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রগেসিভ পার্টিকে (ডিপিপি) ভোট না দিতে চীনের বারবারের হুমকি সত্ত্বেও শনিবার ভোটকেন্দ্রে গেছেন তাইওয়ানের লাখ লাখ মানুষ। তারা চিকিৎসক থেকে রাজনীতিকে পরিণত হওয়া ৬৪ বছর বয়সী ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাইকে বেছে নিয়েছেন নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।
তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থি দল ডিপিপির জন্য এ নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসছে। এখন নতুন প্রেসিডেন্ট কীভাবে বেইজিংকে সামলান কিংবা বেইজিং বিষয়টি কীভাবে নেয়- মূলত এটিই তার শাসনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
সাই ৩.০ নাকি নতুন শুরু
লাই অঙ্গীকার করেছেন, তার মেয়াদ হবে পূর্বসূরী সাই ইং-ওয়েনের আট বছরের শাসনের ধারাবাহিকতা। এমনকি শনিবারের ভাষণেও তিনি বেশ সতর্ক হয়ে কথা বলেছেন এবং সংলাপ ও সহযোগিতার ডাক দিয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারে পূর্বসূরী সাই ইং-ওয়েনের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন লাই। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতা ঘোষণার প্রয়োজন নেই। কারণ তাইওয়ান এখন একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র- এর নাম চীন প্রজাতন্ত্র-তাইওয়ান।
নবনির্বাচিত লাই এই মুহূর্তে সাবেক প্রেসিডেন্ট সাইয়ের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক। তিনি ডিপিপির কমিটিতে উঠে এসেছিলেন ‘নিউ ওয়েভ’ অংশের সদস্য হিসেবে, যারা তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে।
লাই ও তার রানিংমেট সিয়াও বি-খিম দুজনই বেইজিংয়ের কাছে খুবই অপছন্দের ও অবিশ্বস্ত। তাদের দুজনের মূল চীনা ভূখণ্ড ও হংকং ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে চীন।
সিয়াওয়ের বাবা তাইওয়ানিজ ও মা আমেরিকান। তিনি নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের প্রতিনিধি ছিলেন।
এসব কারণে চীন নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে যাবে, সেটি খুবই অনিশ্চিত। উভয় পক্ষের মধ্যে ২০১৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগও নেই। তাইওয়ান মূল চীনের অংশ- সাই এটি মানতে রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় চীন।
উত্তেজনা বাড়ার শঙ্কা
শনিবারের নির্বাচনের রায়ের আরেকটি অর্থ হলো- তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনা অব্যাহত থাকা এবং প্রতিদিনই চীনা জাহাজ ও সামরিক যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকা।
চীন সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে তার অসন্তুষ্টির বার্তা দিতে পারে, যেমনটি তারা করেছিল ২০২২ সালে। মার্কিন কংগ্রেসের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের জেরে দ্বীপটিকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছিল চীনের বিরুদ্ধে।
চীন অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপও বাড়াতে পারে। তাইওয়ানের বিভিন্ন কোম্পানি, পণ্য ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বেইজিং।
কী করবে তাইওয়ান
চীনা সামরিক বাহিনীকে মোকাবিলার জন্য লাইয়ের কৌশল হতে পারে, সাই যা করে গেছেন তা অনুসরণ করা। তিনি তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর জন্য আরও ব্যয়, সাবমেরিন তৈরির কর্মসূচি চালু রাখা এবং যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট সাই বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিছু বিষয় উদ্বেগের হতে পারে যে, লাইয়ের শাসনকাল তার স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কারণে কোনো উসকানি তৈরি করে কি না।
যদিও তার রানিং মেট সিয়াও বাইডেন প্রশাসনের আস্থাভাজন। হয়তো তিনিই যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করতে পারেন যে, লাই চিং-তে বেইজিংকে কোনো উসকানি দেবেন না বলে বিশ্বাস করা যায়।