গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিপ্রায় নিছক ‘কৌতুক’ নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এমনকি এই চেষ্টায় ব্যর্থ হলে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) মার্কিন সাংবাদিক মেগিন কেলির টেলিভিশন শোতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুবিও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান এবং যদি তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দ্বীপটি দখল করতেও পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু জমি দখলের বিষয় নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। আগামী বছরগুলোতে আর্কটিক সাগর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ হয়ে উঠবে। চীন সেটি দখলে নিতে চাইবে, যা আমাদের জন্য হুমকি। তাই বিষয়টি অবশ্যই সমাধান করতে হবে।”
চার বছরের মধ্যে গ্রিনল্যান্ড দখল?
সাক্ষাৎকারে রুবিওর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ২০২৮ সালের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন গ্রিনল্যান্ড কিনতে পারবে কি না? উত্তরে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টই ভালো বলতে পারবেন। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, চার বছর পর আমাদের অবস্থান হবে অত্যন্ত দৃঢ় ও সুসংগঠিত।”
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা
রুবিওর এই মন্তব্যের পরপরই গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউটে এগেডে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। আমাদের ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করা হলে জনগণ তা প্রতিহত করবে।”
গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হলেও দ্বীপটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বিশাল আয়তনের এই দ্বীপে মাত্র ৫৬ হাজার ৫৮৩ জন বসবাস করে, যার প্রায় ৯০ শতাংশ ইনুইট জাতিগোষ্ঠীর সদস্য।
এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প প্রথমবার প্রকাশ্যে বলেন, “সারা বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ এখন আমাদের হাতে থাকা জরুরি।”
কিন্তু ট্রাম্পের পোস্টের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেন, “গ্রিনল্যান্ড আমাদের। এটি বিক্রির জন্য নয় এবং কখনও বিক্রি হবে না। আমরা স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিন লড়াই করছি এবং তা বৃথা যেতে দেব না।”
বিশ্বরাজনীতিতে উত্তেজনা
ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের চেষ্টায় বলপ্রয়োগের পথে যায়, তবে এটি বৈশ্বিক সংঘাতের সূত্রপাত করতে পারে।