ছিলেন কৌতুক অভিনেতা। কিন্তু কখন যে তিনি রাষ্ট্রনেতা হয়ে গিয়েছিলেন তা হয়তো বুঝতেও পারেননি। এমনই বর্ণময় জীবন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির। ক্ষমতায় আসার তিন বছরের মধ্যেই বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
১৭ বছর বয়সে কমেডি প্রতিযোগিতায় নাম লেখান জেলেনস্কি। দ্রুত সুযোগ পেয়ে যান দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কমেডি প্রতিযোগিতায় এবং বিজয়ী হন। পরে নিজেই একটি কমেডি দল গড়েন। ১৯৯৮-২০০৩ কেভিএন নামের ওই জাতীয় প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চবার বিজয়ী হয়েছে তাঁর দল কোয়ার্তার ৯৫। এই দল নিয়ে বহুবার মস্কো ও সোভিয়েত–উত্তর দেশগুলো ভ্রমণ করেছেন জেলেনস্কি। ২০০৩ সাল থেকে কোয়ার্তার ৯৫ ইউক্রেনের টেলিভিশন চ্যানেল ১+১-এর জন্য অনুষ্ঠান বানাতে শুরু করে। রুশ ও ইউক্রেনীয় ভাষার বেশ কিছু টিভি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন জেলেনস্কি।
২০০৮ সালে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লাভ ইন দ্য বিগ সিটি’তে অভিনয় করেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। পরে ছবিটির সিকুয়েল তৈরি হয়। সেখানেও তিনি ছিলেন। ২০১৪ সালে আসে ছবির তৃতীয় কিস্তি। এরই মধ্যে বিভিন্ন ছবিতে অভিনয় চালিয়ে যান তিনি। সেসবের মধ্যে রয়েছে ‘অফিস রোমাঞ্চ, প্রেজেন্ট ডে’, ‘এইট ফার্স্ট ডেট’, ‘নো লাভ ইন দ্য সিটি’, ‘ইয়া, তাই, ভিন, ভোনা’। ‘এইট ফার্স্ট ডেট’ বেশ জনপ্রিয়তা পায়, বের হয় ছবির দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, জেলেনস্কি কাজ করেছেন বেশির ভাগ রুশ ভাষার ছবিতে। তাঁর প্রথম ইউক্রেনীয় ভাষার ছবি ২০১৮ সালের ‘আই, ইউ, হি, শি’। এটিই তাঁর শেষ ছবি। ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা হয় ইউক্রেনীয় ভাষায়। পরে ছবির রুশ অভিনেত্রী এজিয়ান গ্রুজিতের জন্য সেটাকে রুশ ভাষায় অনুবাদ করা হয়। শুটিংয়ের পর ছবিটি ইউক্রেনীয় ভাষায় ডাবিং করা হয়। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি ২০১৫ সালে ‘সারভেন্ট অব দ্যা পিপল’ এবং ২০১৭ সালে ‘স্ভ্যাতি’ নামের দুটি ধারাবাহিকে কাজ করেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
ভলোদিমির জেলেনস্কি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আইনের ছাত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু আইনজীবী হওয়ার কোনও আগ্রহ তার ছিল না। আইনে স্নাতক হন কিয়েভ ন্যাশনাল ইকনমিক ইউনিভার্সিটি থেকে। আইনের সওয়াল জবাবের মধ্যে না গিয়ে অভিনয়ের জগতে ঢুকে পড়েন জেলেনস্কি। নিজেকে এক কৌতুক অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তোলেন। এরপরই ‘সারভেন্ট অফ দ্য পিউপিল’ নামে একটি টেলিভিশন শোয়ের মাধ্যমে সারা দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন জেলেনস্কি।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপরই ক্রমশ প্রেসিডেন্ট পদের দিকে আস্তে আস্তে অগ্রসর হতে শুরু করেন জেলেনস্কি। কোনও রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন জেলেনস্কি এবং বিপুল ভোটে জয়লাভও করেন।
কিন্তু এরপর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে জেলেনস্কির চরম বিরোধ শুরু হয়। যেহেতু জেলেনস্কি ইয়ানুকভিচের মতো রুশপন্থী নেতা ছিলেন না, তাই রাশিয়ার সঙ্গে তার বিরোধ চরমে ওঠে। শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বেধে যায়। রাশিয়ার একের পর এক আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় ইউক্রেন। ক্ষমতা চলে যাওয়া এখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কাছে এখন সময়ের অপেক্ষা।