ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তিন বছর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ইব্রাহিম রাইসিকে মনে করা হয় একদিন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির উত্তরসূরি হবেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দেশটির প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রোববার (১৯ মে) আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় জলাধার প্রকল্প উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। ওই হেলিকপ্টারে তার সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও ছিলেন।
রাইসিকে নিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হেলিকপ্টারের কোনো আরোহী বেঁচে নেই, সোমবার (২০ মে) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
এই দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু হলে তা হবে ইরানের জন্য বিরাট এক ধাক্কা। দীর্ঘ দিন ধরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক চলে আসছে ইরানের। ইব্রাহিম রাইসি ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় প্রতিবেশীদের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন।
ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ১৯৬০ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তর-পূর্ব ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর-জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৮৯ থাকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন রাইসি। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথোরিটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট রাইসি পরবর্তীতে ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ সভার উপচেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এ সভা। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তিনি ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা আটকে যায় এবং ২০২২ সালের শেষের দিকে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশটিতে বড় ধরনের প্রতিবাদ হয়।
রাইসির সময় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছে, আন্তর্জাতিক পরিদর্শনে বাধা দিয়েছে এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে সমর্থন দিয়েছে। এ ছাড়া ইরান গাজার সংঘাতে ইসরায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় এবং হিজবুল্লাহ ও হুথি আন্দোলনের মতো গোষ্ঠীগুলিকে অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে।