ন্যায্য বেতন এবং অন্যান্য সুবিধার দাবিতে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের ইউনিয়নভুক্ত কর্মীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ঘোষণা করেছে। স্থানীয় সময় আজ বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম কম্পানির শ্রমিকরা এই ঘোষণা দিয়েছে। চলতি মাসের ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের সাধারণ ধর্মঘটের শেষ দিনে এ ঘোষণা দেয়া হলো, যা লাগাতার চলবে।
এর আগে, গত ২৯ মে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক।
দীর্ঘ ৫৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বড় রকমের ধর্মঘট ছিল এটি। এরপর প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ৭ জুন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক সংগঠন এনএসইইউ।
তখন ন্যাশনাল স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ইউনিয়নের (এনএসইইউ) প্রধান সন উ-মোক জানিয়ে ছিলেন, তারা ছয় মাস ধরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে প্রচার করে আসছেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় এ প্রথম কর্মবিরতি পালন করছেন।
এতে কতসংখ্যক কর্মী সায় দিয়েছেন তা তিনি নির্দিষ্ট করতে পারেননি।
স্যামসাংয়ের কর্মীরা মূলত তাদের বেতন ও ছুটির দিন নিয়ে ক্ষুব্ধ। ফলে ক্ষোভ আরো ফুঁসে উঠেছে। এরপর গত ৮ জুলাই জাতীয় স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স ইউনিয়নের হাজার হাজার সদস্য তিন দিনের ধর্মঘট শুরু করে।
প্রায় ৩০ হাজার স্যামসাং কর্মী এই ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রথম সাধারণ ধর্মঘটের পরেও সংলাপে যুক্ত হওয়ার কোনো ইচ্ছা কম্পানি দেখায়নি। তাই ১০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করা হলো, যা লাগাতার চলবে।’
ইউনিয়ন বলেছে এই সপ্তাহে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু স্যামসাং অপারেশন এবং উৎপাদন ধীর হয়ে গেছে। তবে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স বলছে, তাদের পণ্য উৎপাদনে অসুবিধা হচ্ছে না।
স্যামসাং এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘উৎপাদনে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তা নিশ্চিত করবে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স।’ তারা আরো বলেছে, ‘সংস্থাটি ইউনিয়নের সঙ্গে একটি কর্যকর এবং সহজ আলোচনা চালাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এদিকে ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কম্পানির উৎপাদন ধীর হয়ে গেছে। ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে আসবে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ।’
ইউনিয়নের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে,‘আমরা আমাদের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’ তবে বিবৃতিতে বলা হয়নি ঠিক কতজন সদস্য এই ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছেন।
এই বছরের শুরুতেও শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা ভালো বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেছে। তবে সেই আলোচনা সফল হয়নি। ধারণা করা হয়, বিশ্বব্যাপী কম্পানিটির প্রায় ২লাখ ৬৭ হাজার ৮৬০ জন কর্মী রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রয়েছে শুধু দক্ষিণ কোরিয়ায়।
উল্লেখ্য, স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স হলো দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ ইউনিট। এটি দেশটির পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যবসাগুলোর মধ্যে বৃহত্তম এবং এটি এশিয়ার অর্থনীতিতে চতুর্থ বৃহত্তম আধিপত্য বিস্তার করে। প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ‘স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স’, যার প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬৯ সালের ১৩ জানুয়ারি।
এদিকে মেডিকেল স্কুলে ভর্তির হার দ্রুত বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার প্রতিবাদে দক্ষিণ কোরিয়ার হাজার হাজার মেডিক্যাল ইন্টার্ন এবং বাসিন্দারা ফেব্রুয়ারী থেকে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে।